অপরাধএক্সক্লুসিভরাজধানী

গায়ের জোরে সরকারী রাস্তা গায়েব

‘পুকুরচুরি’র ঘটনা হরহামেশাই শোনা যায়। দখল হয় জমি, রাস্তা, ফুটপাত। তাই বলে আস্ত একটি সরকারি রাস্তা গায়েব! এমন ‘গায়ের জোর’ দেখিয়েছেন রাজধানীর একজন প্রভাবশালী। বহুতল ভবন নির্মাণ করতে ৩০০ ফুট দীর্ঘ ৮ ফুট চওড়া সিটি করপোরেশনের একটি রাস্তা তিনি গায়েব করে দিয়েছেন।

ফলে এলাকাবাসী পড়েছেন বিপাকে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। রাজউক থেকে ভবন নির্মাণ বন্ধের নোটিশ দিলেও অদৃশ্য কারণে কাজ আটকে থাকেনি। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদ হোসেনকে ফোন করলে প্রশ্ন শুনেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

স্থানীয়রা জানান, ওই রাস্তা দিয়ে তিনটি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ ও মুসল্লিরা মসজিদে যাতায়াত করেন। হঠাৎ গত বছরের শুরুতে রাস্তাটি বন্ধ করে ভবন নির্মাণ শুরু করেন মিজানুর রহমান নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী।

রাস্তার পাশে তার নিজস্ব জমি রয়েছে। বহুতল ভবন গড়তে নিজের জমির সঙ্গে দখলে নিয়েছেন রাস্তার প্রায় পুরোটাই। এমনকি ভবনটি নিচের তুলনায় ওপরের দিকে বেশি বিস্তৃত করেছেন। যা ভবন নির্মাণ নীতিমালার পরিপন্থী।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিলনস্থল বায়তুল হুদা জামে মসজিদ (চারতলা মসজিদ)। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই মসজিদের পাশ দিয়েই দক্ষিণ সিটির আট ফুট চওড়া একটি রাস্তা রয়েছে।

প্রায় তিনশ ফুট লম্বা রাস্তাটি কফিলউদ্দিন দারোগা সাহেবের বাাড়ির পূর্ব পাশ দিয়ে গিয়ে মিশেছে পশ্চিম পাশের সিপাহীবাগের তিতাস রোডের সঙ্গে। ঢাকা মহানগর সিটি জরিপেও এটি রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত আছে। বিভিন্ন সময়ে এ রাস্তায় সিটি করপোরেশন উন্নয়ন কাজ করেছে, তাদের নামে ফলকও আছে। স্যুয়ারেজসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইনও রয়েছে রাস্তায়।

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন সময়ে রাস্তার জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য মিজানুর রহমানকে অনুরোধ করে এলাকাবাসী। স্থানীয় গণমান্যদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করলেও পরে প্রভাব খাটিয়ে ভবন নির্মাণ চালিয়ে যান মিজান। এ কারণে বর্তমানে পুরো রাস্তাই গায়েব হয়ে গেছে। ভবন নির্মাণ নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত চার ফুট জায়গা চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে ঘটেছে উল্টো।

বায়তুল হুদা জামে মসজিদ ও দারুল আকরাম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মফিজুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা দপ্তরে দপ্তরে গিয়েছি। তবে কাজ থামানো যায়নি। করপোরেশনের একটি রাস্তাই গায়েব করে ফেলা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলের অন্যতম রাস্তাটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

দখল হয়ে যাওয়া রাস্তার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন মিজান। তার বাড়ি ঘেঁষে মাত্র দেড় ফুট জায়গা ফাঁকা রয়েছে। ওই পথ দিয়ে একসঙ্গে দুজন মানুষ চলাচল করতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা জোটবদ্ধ হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে।

এ ছাড়া খিলগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, রাজউকে অভিযোগ দেওয়ার পর সংস্থাটির আঞ্চলিক অথরাইজড অফিসার ভবন নির্মাণ বন্ধে লিখিত নির্দেশ দেন। তবে কয়েক দিন কাজ বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ভবন নির্মাণ অনেকটাই শেষ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির অঞ্চল ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা বেদখল হয়ে যাওয়া বিভিন্ন জমি ও রাস্তা উদ্ধারে কাজ করছি। ইতোমধ্যে বেদখল হওয়া অনেকগুলো রাস্তা চিহ্নিত করা হয়েছে।

করপোরেশনের রাস্তা কেউ দখলে রাখতে পারবে না। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজউকের চেয়ারম্যান আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেউই কোনো কিছু করতে পারবে না। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বাড়িতে গেলেও কেউ তার হদিস দিতে পারেননি। মোবাইলে ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদ হোসেনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।

বিষয়টি সম্পর্কে আপনি জানেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক কিছুই জানি। কিন্তু আপনি কে, আপনার ইন্টারেস্ট কেন? আপনি এখানে সমাধান করার কে!’ সমাধানের জন্য ফোন করা হয়নি, স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে অভিযোগের বিষয়টি আপনি জানেন কিনা তা-ই জানতে চাওয়া হয়েছে বলার পর তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

Back to top button