অনলাইনে ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করে আয়
অনলাইনে ছবি বিক্রি বলতে মূলত স্টক ফটো সেল করাকে বুঝানো হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে কাস্টম ফটোগ্রাফি করেও আয় করা যায়। এই পোস্টে আমরা শুধুমাত্র অনলাইন ছবি বিক্রির নিয়ম ও ছবি বিক্রির ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানবো।
অনলাইনে স্টক ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করে আয় করতে হলে কিছু বিষয়ে আগে থেকে জেনে রাখা জরুরি। এসব বিষয় সম্পর্কে প্রথমে জেনে নেওয়া যাক।বেশিরভাগ স্টক ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইটে আবেদন করার পর এপ্রুভাল প্রসেস এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
অর্থাৎ আপনি চাইলেই নিজের ইচ্ছামত ছবি আপলোড করে সেল করা শুরু করতে পারবেন না। নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট স্ট্যান্ডার্ড ও কোয়ালিটি না মিললে আপনার আবেদন অনুমোদিত হবেনা।স্টক ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইটগুলোতে নিজের ইচ্ছামত দাম সেট করার অপশন নেই। অর্থাৎ প্ল্যাটফর্ম প্রদত্ত নির্দিষ্ট দামে আপনার ফটো বিক্রি হবে।
অনলাইনে বিভিন্ন উপায়ে একাধিক প্ল্যাটফর্মে ছবি বিক্রি করতে পারবেন।জনপ্রিয় স্টক ফটোগ্রাফি সাইটগুলো এক্সপোজার প্রদান করলেও অন্য অসংখ্য ক্রিয়েটরের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়। সুতরাং, আপনার কাজ অন্যদের চেয়ে ভালো না হলে ছবি বিক্রি করে আয়ের বিষয়টি মোটামুটি কঠিন লাগবে।আবার স্টক ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইটগুলো কিন্তু আপনার আয়ের সম্পূর্ণ অংশ আপনাকে প্রদান করবেনা। এটি অনেকটা পার্টনারশিপ এর মত কাজ করে। অর্থাৎ আয়ের অংশ আপনার সাথে শেয়ার করবে ওয়েবসাইটগুলো।
অনলাইনে ছবি বিক্রির জন্য শাটারস্টক বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টক ফটো সাইট। শাটারস্টক এর নতুন আরনিং মডেল অনুসারে ৩০ থেকে ৫০% রেভিনিউ ক্রিয়েটরের সাথে শেয়ার করে থাকে।শাটারস্টক থেকে আপনার আয় নির্ভর করবে আপনার কন্ট্রিবিউটর লেভেলের উপর, যা লাইসেন্সকৃত মোট ছবির উপর নির্ভর করে। যেমনঃ প্রতি ডাউনলোডে ৪০% আয় করতে আপনার ছবি কমপক্ষে ২৫হাজার বার ডাউনলোড হতে হবে।
তবে shutterstock.com এ কিছু বাধাধরা নিয়ম রয়েছে। প্রতি ক্যালেন্ডার বছরে কন্ট্রিবিউটর লেভেল রিসেট হয়ে যায় ও ১৫% এ নেমে আসে আয়ের শেয়ার। সব মিলিয়ে প্রতি রয়্যালটি-ফ্রি ডাউনলোডের জন্য ০.২৫ডলার থেকে ০.৫০ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন একজন কন্ট্রিবিউটর।
বিনামূল্যে অনলাইন পোর্টফোলিও তৈরি ও অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় শুরু করতে ৫০০পিক্স (500px.com) সেরা একটি ওয়েবসাইট হতে পারে। ইতিমধ্যে ১৬মিলিয়নের অধিক ফটোগ্রাফার ৫০০পিক্স এর মাধ্যমে ছবি সেল করে থাকেন।৫০০পিক্স এর ফ্রি প্ল্যান দ্বারা প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৭টি ছবি আপলোড করা যায়। এর চেয়ে বেশি আপলোড করতে চাইলে সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান কিনতে হবে। এই ওয়েবসাইট থেকে নন-এক্সক্লুসিভ কনটেন্ট এর জন্য ৩০% ও এক্সক্লুসিভ কনটেন্ট এর জন্য ৬০% রেভিনিউ পাওয়া যাবে।
বৃহৎ স্টক ফটো ভেন্ডরগুলোর মধে এডোবি স্টক একটি। উল্লেখ্য যে অধিকাংশ এডোবি স্টক এর কাস্টমার কিন্তু ডিজাইনারগণ, যারা ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর বা প্রিমিয়ারে ব্যবহারের জন্য এডোবি স্টক ব্যবহার করে থাকেন।
আপনার ছবি যিনি কিনছেন, তার সাবস্ক্রিপশন মডেলের উপর আপনার আয় নির্ভর করে। বড় সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানের ব্যবহারকারী ছবি কিনলে সেক্ষেত্রে ০.৩৩ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন প্রতি ছবিতে। আবার ক্রেডিট প্যাক ইউজার যদি ছবি কিনে সেক্ষেত্রে ৩.৩০ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে প্রতি পারচেজে।
stock.adobe.com এ এক্সটেনডেড লাইসেন্স হিসেবে কাস্টম লাইসেন্সে ছবি বিক্রি হলে সেক্ষেত্রে প্রতি ছবি থেকেই ২৬.৪০ডলার পর্যন্ত আয় সম্ভব। তবে ভিডিও সেল করে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৫৬ থেকে ৭০ ডলার আয় করা যায়। এছাড়া সফল ক্রিয়েটরদের জন্য বোনাস প্রোগ্রাম হিসেবে ক্রিয়েটিভ ক্লাউড অ্যাপসের অ্যাকসেস দেওয়া হয়।
আইস্টক (istockphoto.com) ও গেটিমেজেস (gettyimages.com) এর কন্ট্রিবিউটর এর মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। যেমনঃ আইস্টক এর কন্ট্রিবিউটর প্রোগ্রামে গেটিইমেজেস এর মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। আইস্টক থেকে ১৫% থেকে ৪৫% পর্যন্ত আয় করা যায়। এক্সক্লুসিভ কন্ট্রিবিউটর হতে পারলে সেক্ষেত্রে আয়ের অংক আরো বেশি হতে পারে। উল্লেখ্য যে গেটিইমেজেস শুধুমাত্র প্রফেশনাল মানের হাই কোয়ালিটি ছবি গ্রহণ করে। গেটি ইমেজেস হচ্ছে আইস্টকের প্যারেন্ট কোম্পানি।
ড্রিমসটাইম কন্ট্রিবিউটর প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে ২৫% থেকে ৬০% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়। আবার এক্সক্লুসিভ কন্ট্রিবিউটর হতে পারলে সেক্ষেত্রে বাড়তি ১০% কমিশন পাওয়া যাবে। তবে এক্সক্লুসিভ কন্ট্রিবিউটর হতে হলে কমপক্ষে ৫০টি এপ্রুভড ছবি থাকতে হবে।
ড্রিমসটাইম (dreamstime.com) সবচেয়ে কম দামে স্টক ইমেজ সেল করে, যার ফলে এই ওয়েবসাইটের কাস্টমার ও ট্রাফিক বেশি। এর মানে হলো ড্রিমসটাইম এর মাধ্যমে দ্রুত সেল জেনারেট করে আয় সম্ভব। আবার আয়ের অংক বাড়ানো যায় এক্সটেনডেড লাইসেন্স এর মাধ্যমে।
অন্যসব স্টক ফটো ওয়েবসাই থেকে পিকফেয়ার কিছুটা আলাদা। পিকফেয়ার এ আপনার ছবির মূল্য আপনি নিজেই সেট করতে পারবেন ও আয়ের ১০০% রাখতে পারবেন। অনেকটা পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর সাথে তুলনা করা যায় পিকফেয়ার কে।
তবে ফ্রি পিকফেয়ার একাউন্টের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফ্রি পিকফেয়ার একাউন্ট দ্বারা সর্বোচ্চ ৫০টি ছবি আপলোড করা যাবে। আবার যিনি ছবি কিনছেন, তাকে ২০% ফি প্রদান করতে হবে। তবে পিকফেয়ার (picfair.com) প্লাস প্ল্যানের মাধ্যমে এসব সীমাবদ্ধতা দূর করা যেতে পারে।
নিজের একটি ওয়েবসাইট খুলে সেখানে আপনার ছবি বিক্রি করতে পারেন। তবে আপনার কাজের যথেষ্ট পরিচিতি না থাকলে নিজের ওয়েবসাইট খুলে ছবি বিক্রি করাটা অনেক কঠিন হতে পারে।নিজের ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাওয়া যায়।
ছবির দাম নিজের ইচ্ছামত সেট করা যায়। আবার আয়ের সম্পূর্ণ অর্থ নিজের কাছে রাখা যায়, যেহেতু এখানে কোনো থার্ড পার্টিকে কমিশন দিতে হচ্ছেনা। আবার নিজের ওয়েবসাইটে যেহেতু সকল ছবি আপনার থাকবে, তাই এখানে অন্তত কোনো প্রতিযোগিতা নেই।