আজ থেকে পাঁচ ছয় বছর আগের কথা। তখন স্বামী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে আনেছা বেগমের সংসার ভালোই চলতো। স্বামী ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাত। হঠাৎ সড়ক র্দুঘটনায় আহত হন তিনি। এর পর থেকে সে আর ভ্যান চালাতে পারে না। আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক দুর্বিষহ জীবন নেমে আসে আনেছার সংসারে।
জীবন সংগ্রামী এই নারী উদ্যোক্তা আনেছা বেগমের বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের তেড়বাড়িয়া গ্রামে। স্বামী আব্দুর রাজ্জাক ও চার ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে সংসার তার।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আনেছা বেগমের খামারে চিনা মুরগী নামে পরিচিত তিতির জাতের পাখি আছে প্রায় ১০০ টি। আনেছা জানায় কিছু দিন আগে তার খামারে তিতির ছিল প্রায় ২৫০ টির মত। সংসারের অভাব অনটনের কারনে খাদ্যের যোগান দিতে না পরায় ১৫০টির মত বিক্রয় করতে হয়েছে তাকে।
স্বামীর দুর্ঘটনার পর এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে স্বামীর চিকিৎসা ও সংসার চালাতে শুরু করেন তিনি। দরিদ্র সংসারে এভাবে আর কতদিন। ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোনো কোনো দিন না খেয়েও কাটাতে হয় তাদের। তখন আনেছা বেগম ভাবেন নিজেই একটা কিছু করা দরকার।
একদিন চাঁচকৈড় বাজার থেকে কিনে আনেন এক জোড়া চিনা মুরগী। নিজ বাড়িতে শুরু করেন পালন। এভাবে ছয় মাস লালন পালন করা পর চিনা মুরগী ডিম দিতে শুরু করে। ডিম থেকে বাচ্চা আর বাচ্চা থেকেই শুরু হয় তার চিনা মুরগীর ছোট্ট খামার। এই খামার তার এখন সংসারের আয়ের একমাত্র উৎস।
আনেছা বেগম তার খামার থেকে ২০০ টাকা হালি হিসাবে প্রতিটি ডিম বিক্রয় করেন ৫০টাকায় এবং মুরগীর বাচ্চা বিক্রয় করেন ২০০ টাকায়। মাংসের জন্য ওজন ভেদে বড় মুরগী বিক্রয় হয় ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকা। চিনা মুরগীর মাংস সুস্বাদু বলে অনেকে খামারেই কিনতে আসেন। দুর দুরান্ত থেকে কিছু পাইকাররাও ডিম বাচ্চা আর মুরগী কিনতে আসেন তার খামারে। এসব বিক্রয় করে প্রতিমাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হয় তাই দিয়েই সংসার চলে আনেছা বেগমের।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার বলেন, তিতির জাতের চিনা মুরগী পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় উদ্যোগ। আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই। দেশী মুরগীর মতই ছেড়ে দেওয়া অবস্থায় বা খামার পদ্ধতিতে দুই ভাবেই পালন করা যায়। তবে এই মুরগী এখনও বাজারজাতকরণের তেমন সাড়া পড়েনি। এটাকে বাজারজাতকরণের একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে বাজারজাতকরণের জন্য আমরা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছি।
আনেছা বেগম বলেন, আমার সংসার আগের চেয়ে বড় হয়ে গেছে। ছেলে মেয়েরা পড়া লেখা করছে। খামারের এই আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মুরগীর খাদ্য যোগান করতে না পারায় কিছু দিন আগে ১৫০ মুরগী বিক্রয় করেছি। সরকারী বেসরকারী সহযোগিতা বা সহজ কিস্তিতে ঋণ পেলে খামারটি বড় করার ইচ্ছা আছে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, দেশের অন্যান্য জায়গার মত সিংড়াতেও অনেকেই এই খামারে এগিয়ে আসছে। আমরা আশা করছি তারা লাভবান হবেন। চিনা মুরগী পালনে আগ্রহীদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব ধরনের পরার্মশ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে।