বার্সেলোনায় যৌন হেনস্তার শিকার ব্রাজিলিয়ান নারী ফুটবলার
ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার কর্তাদের বিরুদ্ধে এর আগেও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। এবার ক্লাব সভাপতি বরাবর সরাসরি অভিযোগ করলেন এক ব্রাজিলিয়ান নারী ফুটবলার। তিনি বলেছেন, ‘সকল প্রকার হয়রানি মোকাবেলায় খেলোয়াড়দের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা ক্লাবের বড় দায়িত্ব। আশা করি, বার্সেলোনা এসব বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
অভিযোগকারীর নাম জিওভানা কুইরোজ। বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তাকে লিখা চিঠিতে কুইরোজ বলেছেন, ‘নারীর প্রতি হয়রানি ও পুরুষের সহিংসতার সংস্কৃতি মেনে নেয়া যায় না। অধিকাংশ ক্ষমতাধারী তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে কাউকে বশীভূত করার জন্যই। এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল হলো অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা।’
তিনি ব্রাজিল জাতীয় দলে ২০২০ সালে অভিষেকের পর এই ফরোয়ার্ড এখন পর্যন্ত খেলেছেন পাঁচ ম্যাচ। বর্তমানে বার্সেলোনা থেকে ধারে আরেক স্প্যানিশ ক্লাব লেভান্তের হয়ে খেলছেন তিনি।কুইরোজ বলেছেন, করোনার সময়ে যৌন হেনস্তা করা হয়েছে তাকে। তবে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে এফসি বার্সেলোনা।
কুইরোজ জানান, গত বছর বার্সেলোনায় যৌন হেনস্তার শিকার হন তিনি। ব্রাজিলের হয়ে খেলতে চাওয়ার কারণেই নাকি একের পর এক হয়রানি করা হয় তাকে। তিনি বলেন, ‘আমাকে নানাভাবে বুঝানো হতো যে ব্রাজিলের হয়ে খেলাটা আমার ক্লাব ভবিষ্যতের জন্য মোটেও ভালো ফল বয়ে আনবে না।
প্রতিনিয়ত হয়রানির পরেও আমি ব্যাপারটাতে তেমন গুরুত্ব দিইনি। এরপর অন্যভাবে আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে খেলার আশা যেন ছেড়ে দিই সেজন্য তারা আমাকে এবিউজ করতে থাকে। ক্লাবে আমার পেশাদার জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তারা খেয়াল খুশিমতো নিয়ম-কানুন তৈরি করে নেয়।’
লাপোর্তার উদ্দেশ্যে কুইরোজ লিখেছেন, ‘আমাকে জোর করে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।আমি বাড়ি ছেড়ে যেতে পারিনি। ক্লাবে কয়েক মাস অপমানজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি আমি। প্রিয় সভাপতি, এই অবস্থানে পৌঁছানো সহজ ছিল না। ওই ঘটনার পর অনেক মাস ধরে মানসিক সমস্যা ভোগ করেছি। আমি বার্সেলোনা মহিলা দলে যে আপত্তিজনক আচরণের শিকার হয়েছি তার নিন্দা প্রকাশ করছি।’
২০২১’র ফেব্রুয়ারিতে বার্সেলোনার মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোয়ারেন্টিন পালন করেন কুইরোজ। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখে। বাইরের বের হতে দেয়নি। আমি অনুশীলন করতে পারিনি। আর কোনো সাধারণ রুটিন ছিল না। আমি একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিলাম।’
কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষে কুইরোজকে ব্রাজিল জাতীয় দলে যোগ দেয়ার সম্মতিপত্র প্রদান করে ফিফা। তিনি জাতীয় দলে যোগ দেন। কিন্তু ফিরে আসার পর বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন এই ফুটবলার। কুইরোজ বলেন, ‘ক্লাব ডিরেক্টরের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ডাকা হয় আমাকে। আমার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। বলা হয়, এই কারণে আমাকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হবে। এ কথা শোনার পর আমি অবাক হয়ে যাই।’
কুইরোজ ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বার্সেলোনা। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনাকালীন ব্রাজিলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন এই নারী ফুটবলার। সিদ্ধান্তটি চিকিৎসকের পরামর্শের বিরুদ্ধে ছিল। কুইরোজ কোয়ারেন্টিন থেকে বেরিয়ে ক্লাবের আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে। সে ক্লাব ও দলের অধিনায়কেরও সম্মতি নেয়নি।