ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পার্লামেন্টে ভোটের যুদ্ধে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই তার বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে পার্লামেন্টে ভোট হবে। প্রথমে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তানের জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর এখন ইমরান খানের জন্য প্রধানমন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখা অনেকটা অসম্ভবই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাক গণমাধ্যমগুলোও বৃহস্পতিবার রিপোর্ট করেছে যে, ইমরান খানের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। এদিকে পাকিস্তানের চলমান এই রাজনৈতিক সংকটের পেছনে হাত থাকার অভিযোগ স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৪২টি। ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন। এরইমধ্যে বিরোধী জোটের হাতে রয়েছে ১৯৯ ভোট। অপর দিকে ইমরান সরকারের রয়েছে মাত্র ১৪২ ভোট।
অথচ জাতীয় পরিষদে পিটিআইয়ের ১৫৫ আইনপ্রণেতা রয়েছেন। এর মানে ইমরানের নিজ দলের ১৩ আইনপ্রণেতার ভোটও তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। ফলে এখন ইমরান খানের সরকার পতন অনেকটাই নিশ্চিত। পার্লামেন্টে আনা বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে দেশটিতে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী বিদায় নিতে যাচ্ছেন। পাকিস্তানে এর আগেও কোনো প্রধানমন্ত্রীই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।
করাচিভিত্তিক জিও টিভি জানাচ্ছে, ইমরানের পতন এখন শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার। বৃহস্পতিবার তাদের হিসাব অনুযায়ী, এরইমধ্যে পার্লামেন্টে ১৯৯-১৪২ ভোটে পিছিয়ে পড়েছেন ইমরান। তবে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য ৩ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এদিন জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোটের একদম আগ মুহূর্তে এসে বুধবার ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)। পার্লামেন্টে তাদের সাতজন আইনপ্রণেতা রয়েছেন। ভোটের আগে বিরোধীদের সঙ্গে তাদের হাত মেলানো ধুঁকতে থাকা পিটিআই সরকারের জন্য বড় ধাক্কা।
প্রথম থেকেই পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য বিদেশী শক্তিকে দায়ী করে আসছেন ইমরান খান। দেশটিতে জোর গুঞ্জন চলছে, যুক্তরাষ্ট্রেরই হাত রয়েছে এই অস্থিরতার পেছনে। যদিও এমন দাবি এবার সরাসরি অস্বীকার করলো যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার জিও নিউজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত এমন দাবি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। পাক সরকার এরইমধ্যে একটি চিঠি প্রকাশ করেছে যাতে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রমাণিত হয় বলে দাবি করছেন তারা। এরইমধ্যে সিনিয়র তিন সাংবাদিক ও মন্ত্রীসভার সদস্যদের সামনে চিঠিটির বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গটি তুলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন উত্থাপন করে জিও নিউজ। এর জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জানান, ইমরান খানকে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে যুক্ত থাকার যে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উঠেছে তা ভিত্তিহীন। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক সংকট পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা দেশটিতে আইনের শাসন দেখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের চলমান সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে সম্মান জানায় বলেও জানায় পররাষ্ট্র দপ্তর।
বুধবার আরশাদ শরিফ, কাশিফ আব্বাসি এবং ইমরান রিয়াজ খানসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে এই চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়েছে। পরে শরিফ জানান, পিটিআই মন্ত্রী আসাদ উমর তাদের কাছে কিছু তথ্য শেয়ার করেছেন। তবে চিঠিটি বেশ দূর থেকে প্রদর্শন করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যদি ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সফল হয় তাহলে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সমস্যা কমিয়ে দেয়া হবে। অত্যন্ত স্পষ্ট হুমকি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে চিঠিটি নিয়ে আলোচনার সময় সেখানে থাকা মন্ত্রীদের চোখ ভিজে যায়। তবে ইমরান খান জানাননি কোন দেশের তরফ থেকে এই চিঠি এসেছে। চিঠির বিষয়টি সেনা প্রধান এবং ডিজি আইএসআই’র সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।