প্রতিবছরই গরম এলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। এর কিছু কারণও রয়েছে। গরমে শহরাঞ্চলে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। সাধারণত পানিবাহিত জীবাণুর মাধ্যমে ডায়রিয়া হয়। গরমের সময় রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে, যানবাহনে দূষিত পানি ও শরবত পানের প্রবণতা বাড়ে।
এ ছাড়া এবার করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানা, বিশেষ করে হাত ধোয়ায় অনীহা ডায়রিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আইসিডিডিআরবি বলছে, এবার ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ কলেরা।
এতে সাদা চালধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা হয়, দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় শরীর। দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমেই এ জীবাণু ছড়ায়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, মাছি, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের সময় অপরিষ্কার হাতের ব্যবহার—এ ধরনের প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী।
চৈত্রের শুরু থেকেই দাবদাহ চলছে। এর সঙ্গে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। শুধু আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ঢাকার হাসপাতালেই কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। সারা দেশের হাসপাতালগুলোতেও ডায়রিয়া রোগীর চাপ বাড়ছে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডায়রিয়া যেহেতু খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বাইরের পানি ও খাবার পরিহার করুন। রাস্তার ধারের শরবত, আখের রস, লেবুপানি পান করবেন না। বাইরে গেলে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন।
পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। ফ্রিজের খাবার অবশ্যই ভালো করে গরম করে খেতে হবে। বাসি খাবার খাবেন না। খাওয়ার আগে ও শৌচাগার ব্যবহারের পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা খুব জরুরি।
সাবধানতা অবলম্বন করার পরও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, বারবার খাবার স্যালাইন খেতে হবে। সঙ্গে অন্যান্য তরল যেমন পানি, ডাবের পানি, চিড়ার পানি ইত্যাদিও খেতে পারেন। পানিশূন্যতা যেন না হয়ে যায়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে।
ডায়রিয়ার সময় স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করুন। সহজপাচ্য ও পরিচ্ছন্ন খাবার খান। শিশুরা মায়ের বুকের দুধ বন্ধ করবে না। সব ধরনের পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করবে।চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।
শিশুদের ক্ষেত্রে ঠিকমতো প্রস্রাব হচ্ছে কি না, কাঁদলে চোখে পানি আসে কি না, নেতিয়ে যাচ্ছে কি না, চোখ গর্তে ঢুকে যাচ্ছে কি না, এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।ডায়রিয়া সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়। কেবল পানিশূন্যতা রোধে যথেষ্ট স্যালাইন ও তরল খেলেই হলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ লাগে না।
তবে কয়েকটি কারণে রোগীকে চিকিৎসক অথবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতে পারে। যেমন পানিশূন্যতা দেখা দিলে, ডায়রিয়ার সঙ্গে বারবার বমি, জ্বর, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া ও পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে। বিশেষ করে শিশুদের বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি।