গতকাল শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার জালকুড়ি এলাকা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে ওই যুবক হতাশা থেকে দুই সন্তানসহ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার কথা জানান। দোকান থেকে তিনজনের জন্য কাফনের কাপড়ও সংগ্রহ করেন। ফেসবুকে ওই যুবকের আত্মহত্যার বিষয়টি জানতে পারেন তাঁরই ফেসবুকের এক বন্ধু। তিনি দ্রুত জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশের তৎপরতায় বেঁচে যায় তিনটি প্রাণ।
১০ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। সংসারে আছে ৯ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ৪ বছর বয়সী এক ছেলেসন্তান। সম্প্রতি পারিবারিক কলহের জেরে ওই দম্পতির বিচ্ছেদ ঘটে। স্বামীকে তালাক দিয়ে দুই সন্তানকে বাবার কাছে পাঠিয়ে দেন স্ত্রী। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে শ্বশুরবাড়ি থেকে লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে আসেন স্বামী।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ প্রথমে ফেসবুক থেকে ওই যুবকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে। এরপর তাঁর সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করে তাঁকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফেরায়। পরে থানায় ডেকে এনে কাউন্সেলিং ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে আত্মহত্যার পথ থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল হাসান বলেন, ‘সংসারটি টিকে যাওয়ার মতো। পরে শ্বশুর, শাশুড়ি, আইনজীবী ও স্থানীয় গণ্যমান্য এক ব্যক্তির উপস্থিতিতে ওই ব্যক্তিকে তাঁদের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। মানবিক কারণে তাঁকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। তাঁরা একসঙ্গেই আছেন।’
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, তাঁর কর্মজীবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দিন ছিল এটি। সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে সব ধরনের পন্থা অবলম্বন করে তিনজনকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফেরাতে সক্ষম হন।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ওই ব্যক্তির স্ত্রী তাঁকে তালাক দিলে প্রচণ্ড হতাশা থেকে দুই সন্তান নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তিনি। পরিকল্পনা ছিল লাইভে থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার ভাড়া বাসায় গিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে গলায় ফাঁস দেবেন। ফেসবুক লাইভে থেকে তিনি বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। ওই ব্যক্তি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন। থানায় ডেকে এনে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আত্মহত্যার পথ থেকে নির্বৃত্ত করা হয়েছে।