বর্তমান সময়ের আলোচিত একটি প্রযুক্তি হলো এমবেডেড সিম বা ই-সিম। অনেকের কাছেই নতুন প্রযুক্তি হওয়ার ফলে ই-সিম সম্পর্কে সবার মনে এই প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক। এই পোস্টে ই-সিম সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর জানবেন যা সকলের জানা উচিত।
এমবেডেড বা ই-সিম মূলত ফোনের মাদারবোর্ডে আগে থেকে যুক্ত থাকে। অর্থাৎ এই সিম আপনাকে বারবার খুলে লাগাতে হবেনা। এই সিম এর প্রযুক্তি রিরাইটেবল, অর্থাৎ একটি ই-সিম থেকে সাপোর্টেড সকল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাবে। ই-সিম এর ক্ষেত্রে চিপ ও সিকিউর সফটওয়্যার ফোনের মধ্যে বিল্ট-ইন থাকে। আর সিম কাজ করতে প্রয়োজনীয় তথ্য ডাউনলোড করা হয়।
আমরা ইতিমধ্যে সাধারণ সিম এর সাথে পরিচিত যা এক ফোন থেকে খুলে অন্য ফোনে ব্যবহার করা যায়। তবে সিম ব্যবহার এর এই ধারণা সম্পূর্ণভাবে বদলে দিতে যাচ্ছে ই-সিম। গত কয়েক বছরে মোবাইল ও আইওটি ডিভাইসসমূহে নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ই-সিম।
ই-সিম সিম কার্ড ডাউনলোড করে ব্যবহার করার মত বিষয়। ইসিম সমর্থিত ডিভাইসে একটি কিউআর কোড স্ক্যান করেই ইনস্টল করতে পারেন ই-সিম! এরপর এটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করতে পারবেন।আপনি চাইলে বিভিন্ন অপারেটর বা প্যাকেজের মধ্যে অদলবদল করতে পারবেন সহজেই। আগের মত সিম কার্ড খুলে আবার ইনসার্ট করার দরকার হবেনা। একটি ফোনে অনেকগুলো ই-সিম প্রোফাইল সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যাবে।
ই-সিম কার্ড অনেক ছোট হয়ে থাকে। সাধারণ সিম এর চেয়েও অনেক ছোট ই-সিম। ই-সিম এর সাইজ হতে পারে ২.৫mm by 2.3mm আর পুরুত্ব মাত্র ০.৩মিলিমিটার।তবে ই-সিম এর সাইজ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ এই সিম আপনাকে কোথাও লাগাতে হচ্ছেনা। সাপোর্টেড ফোনগুলোতে আগে থেকেই ই-সিম লাগানো থাকে। এটা ফোনের ভেতরে মাদারবোর্ডের সাথে আছে। আপনি হয়ত এটা কখনো দেখবেনই না।
তবে উল্লেখিত বিষয় ছাড়া ই-সিম ও সাধারণ সিম এর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। উভয় ধরনের সিম নেটওয়ার্ক অপারেটরের সেল টাওয়ারের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সুবিধা প্রদান করে। অসংখ্য ডিভাইসে ই-সিম ব্যবহার করা যায়, যেমনঃ স্মার্টফোন, ওয়্যারেবল ও কম্পিউটার, ইত্যাদি। ই-সিম স্মার্টফোন এর পাশাপাশি অন্যসব ডিভাইসেও ব্যবহার সম্ভব, যার ফলে এটি একটি স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হয়ে উঠছে।
ই-সিম সাপোর্টেড ডিভাইসের সংখ্যা দিনেদিনে বেড়েই চলেছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মোবাইল থেকে শুরু করে পোর্টেবল কম্পিউটার পর্যন্ত, প্রায় সকল ক্ষেত্রে এমবেডেড সিম কার্ড এর ব্যবহার দেখা যাবে। গুগল এর অ্যান্ড্রয়েড ওএস, অ্যাপল এর আইওএস ও মাইক্রোসফট এর উইন্ডোজ ১০ ই-সিম সাপোর্ট করে।
অর্থাৎ কোনো ডিভাইসে ই-সিম ব্যবহারে কোনো বাধা নেই।বর্তমানে অ্যাপল এর আইফোন, গুগল পিক্সেল, মটোরোলা রেজার, হুয়াওয়ে পি৪০, স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ড ও গ্যালাক্সি নোট, এস২০, এস২১ ও এস২২ সিরিজের অনেকগুলো ফোন ই-সিম সাপোর্ট করে।
অন্যদিকে অ্যাপল ওয়াচ, হুয়াওয়ে ওয়াচ ২, স্যামসাং গিয়ার ও গ্যালাক্সি, অপো ওয়াচ, ইত্যাদি ডিভাইসও ই-সিম সাপোর্ট করে। এছাড়া অ্যাপল এর আইপ্যাড এবং এইচপি, লেনোভো ও মাইক্রোসফট এর কিছু কম্পিউটারে ই-সিম ব্যবহার করা যায়। হুয়াওয়ে এর ও ই-সিম সাপোর্টেড পিসি রয়েছে।
নতুন প্রযুক্তি মানে হলো নতুন সুযোগ সুবিধা। ই-সিম এর ক্ষেত্রেও অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে ব্যবহারকারীদের জন্য ই-সিম একটি আশীর্বাদস্বরুপ হতে যাচ্ছে।একটি ডিভাইস যদি ই-সিম চালিত হয়, তবে ডিভাইস চালুর সাথে সাথে ই-সিম এর ফাংশনালিটি ব্যবহার করা যাবে। আবার ই-সিম রিরাইটেবল হওয়ায় ব্যবহারকারীগণ সহজেই কোনো লোকাল সিম ব্যবহার করতে পারবেন ভ্রমণের সময়, যাতে প্রিমিয়াম রোমিং ফি দিতে হচ্ছেনা।
সার্ভিস প্রোভাইডারদের ও বেশ সুবিধা রয়েছে ই-সিম কার্ডের ক্ষেত্রে। যেহেতু কাস্টমারদের ফিজিক্যাল সিম কার্ড প্রদান করতে হয়না, তাই নতুন অপারেটরে সুইচ করার অভিজ্ঞতা বেশ সহজ হতে যাচ্ছে। আবার অসংখ্য ডিভাইসে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরী করছে ই-সিম।ই-সিম ছোট হওয়ায় স্মার্টফোনের খুব কম জায়গা দখল করে। যার ফলে ফোন ডিজাইনারদের বেশ সুবিধা হয় ওয়াটার ও ডাস্ট রেসিস্ট্যান্স এর মত ফিচার ফোন এড করতে।