একটি রাষ্ট্রীয় টিভি সংবাদ সম্প্রচারের সময় ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন একজন রাশিয়ান টেলিভিশনের সম্পাদক। সেই চাকরিটা এবার তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানালেন। এরপরই ফ্রান্স তাকে আশ্রয় গ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়। যদিও নিজেকে “একজন দেশপ্রেমিক” হিসেবে উল্লেখ করে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন ওই প্রতিবাদী রাশিয়ান সাংবাদিক।
মারিনার দুটি ছোট সন্তান রয়েছে। মায়ের কীর্তি দেখে সন্তানেরা বেশ উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন ওই রাশিয়ান সাংবাদিক। সেই সঙ্গে বলেছেন , ”আমাদের এই ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে যাতে এই উন্মাদনা পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত না হয়, আশা করি আমার ছেলে যখন বড় হবে তখন সে বুঝতে পারবে কেন আমি এটা করেছি।”
চ্যানেল ওয়ান টেলিভিশনের সম্পাদক মারিনা ওভস্যানিকোভা সোমবার সন্ধ্যায় লাইভ সংবাদ সম্প্রচারের সময়ে সেটে এসে চিৎকার করে বলেছিলেন “যুদ্ধ বন্ধ কর” ।সেই সঙ্গে হাতে লেখা প্লাকার্ডে দাবি করেছিলেন দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো রাশিয়ার জনগণকে মিথ্যে কথা বোঝাচ্ছে। এরপরই তাকে আটক করা হয় এবং মস্কো আদালত দ্রুত তাকে ৩০ হাজার রুবেল (২২০ পাউন্ড ) জরিমানা করে।
যদিও বর্তমানে তিনি মুক্ত , যেকোনো সময়ে তাঁর ওপর নেমে আসতে পারে নতুন আইনের খাঁড়া। মারিনা বৃহস্পতিবার মস্কো থেকে ফ্রান্স ২৪ টেলিভিশনকে বলেছেন যে তিনি চ্যানেল ওয়ান থেকে তার পদত্যাগের জন্য সমস্ত নথি হস্তান্তর করেছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট, ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, এই সপ্তাহের শুরুতে ওভস্যানিকোভাকে আশ্রয় বা অন্যান্য ধরনের কনস্যুলার সুরক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বলেছিলেন যে তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলে তার মামলাটি তুলে ধরবেন।তবে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ওভস্যানিকোভা জার্মানির ডের স্পিগেলকে বলেছেন যে তিনি তার প্রস্তাব গ্রহণ করছেন না এবং রাশিয়াতেই থাকবেন।
ওভস্যানিকোভা ফ্রান্স ২৪ কে বলেছেন যে তার কিছু সহকর্মী ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন কিন্তু অনেকে আবার চাইলেও তা করতে পারেননি। কারণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ শোচনীয় । ক্রেমলিন ইতিমধ্যেই এই যুদ্ধকে “বিশেষ সামরিক অভিযান” বলে বর্ণনা করেছে। যদিও প্রেসের স্বাধীনতার পক্ষে সরব কর্মীরা দাবি করেছেন , দেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন যুদ্ধের মারাত্মক বিকৃত ছবি রাশিয়ার জনগণের সামনে তুলে ধরছে ।
রুশ সাংবাদিক বলেন, “আমি আমার দেশ ছেড়ে যেতে চাই না,কারণ আমি একজন দেশপ্রেমিক, আমার ছেলে আরও বেশি। আমরা কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে চাই না, কোথাও যেতে চাই না।” তিনি ডের স্পিগেলকে বলেছিলেন যে তিনি লাইভ অনুষ্ঠানে যা করেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে অনেক সহকর্মী ব্যক্তিগতভাবে তার প্রতি সহানুভূতিশীল। কারণ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের জন্য কাজ করা বেশিরভাগ লোকেরা খুব ভালভাবে বোঝেন যে আদপে কী ঘটছে ।