রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। পশ্চিমাদের অস্ত্র পেয়ে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধও গড়ে তুলেছে ইউক্রেন। এর মধ্যে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, চীনের কাছে অস্ত্র চেয়েছে রাশিয়াও।
এ পরিস্থিতিতে রাশিয়া যাতে অস্ত্র না পায়, সে জন্য চীনকে চাপ দিতে শুরু করেছে ওয়াশিংটন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজ সোমবার চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের কথা রয়েছে। ইতালির রোমে ওই বৈঠক হওয়ার কথা। যদিও বেইজিং ওই বৈঠকের আগেই জানিয়ে দেয়, রাশিয়ায় অস্ত্র পাঠানোর খবর ‘ভুয়া’।
অস্ত্র দিতে চীনকে রাশিয়ার অনুরোধের বিষয়টি সামনে আনে বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা সংবাদমাধ্যম। সেগুলো হলো ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট। এর আগে থেকেই অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করছিলেন, হামলা শুরুর পর রুশ সামরিক বাহিনীতে কিছু অস্ত্রের সংকট দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান–এর খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেন অভিযান শুরুর পর থেকেই চীনের অবস্থান অনেকটাই অস্পষ্ট। এখন পর্যন্ত রাশিয়ার হামলার নিন্দা জানায়নি বেইজিং। এমনকি হামলা বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের আনা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে দেশটি।তবে গত সপ্তাহে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের পর ইউক্রেন পরিস্থিতি ‘সর্বাত্মকভাবে নিয়ন্ত্রণে’ আনা আহ্বান জানান চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কয়েক মাস আগেই নিয়েছিলেন। চীনকে বিষয়টি জানিয়েছিল তারা। তবে সে সময় তা আমলে নেয়নি বেইজিং। বরং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুতিন মিথ্যা বলছেন বলে ভুল বুঝেছিল দেশটি।
রোমের ওই বৈঠকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ও চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ইয়াং জিয়েচি উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে আভাস দিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে বেইজিংকে সতর্ক করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন সুলিভান। চীন এমন পথে হাঁটলে তা ঐতিহাসিক ভুল হবে এবং বিশ্বরাজনীতি নতুন দিকে মোড় নেবে বলেও স্পষ্টভাবে বার্তা দেবেন তিনি।
চীন যদি রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা করে, তাহলে বিশ্ব নানা পক্ষে ভাগ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি গতি পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের চীনবিষয়ক সাবেক পরিচালক রায়ান হাস বলেন, এমন পরিস্থিতি এড়াতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনা করতে হবে।
বৈঠকের আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে সুলিভান বলেন, ‘রাশিয়াকে চীন কীভাবে সহায়তা করে, তা আমরা নিবিড়ভাবে নজরদারি করছি। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আমরা বেইজিংকে বলেছি, আমরা চুপ থাকব না এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রাশিয়ার পাশে কোনো দেশকে দাঁড়াতে দেব না।’ রাশিয়াকে সহায়তার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, চীন যদি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে মস্কোকে সহায়তা করে, তাহলে এর পরিণতি গুরুতর হবে।
তবে অস্ত্র চেয়ে রাশিয়ার অনুরোধের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন ওয়াশিংটনে চীনের রাষ্ট্রদূত লিউ পেনগিউ। সিএনএনকে তিনি বলেন, এ নিয়ে তাঁর কানে কিছুই আসেনি। চীনা এই কূটনীতিকের ভাষ্য, এই মুহূর্তে ইউক্রেনের পরিস্থিতি আদতেই বিশৃঙ্খল। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতি যেন আরও গভীর না হয় এবং নাগালের বাইরে চলে না যায়, তা সামাল দেওয়াই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। তবে ওই সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।