নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাঠানটুলী এলাকার বাসা থেকে নিখোঁজ শিশু শাম্মি আক্তারকে (৫) গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার খায়েরহাট নিজ বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। শাম্মি ওই গ্রামের শামীম মোল্যা ও জাহানারা দম্পতির সন্তান। ঘটনার পর থেকে বাবা শামীম পলাতক। তিনি নিজেই মেয়েকে লুকিয়ে ‘নিখোঁজ নাটক’ সাজিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিশুর মা, কাশিয়ানী ও ফতুল্লা মডেল থানার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাম্মির বাবা শামীম মোল্যা এক বিধবা নারীর সঙ্গে পরকীয়া রয়েছে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই দ্বন্দ্ব হয়। ১১ মার্চ সকালে তাঁদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া বাধে। দুপুরে খাবার খেয়ে দুজনে একমাত্র মেয়ে শাম্মি আক্তারকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। হঠাৎ বিছানায় শাম্মিকে পাওয়া যায়নি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশপাশের ডোবায় অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে খোঁজে ব্যর্থ হয়।
শিশু শাম্মিকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে ১১ মার্চ তার মা জাহানারা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরের দিন মামা রিয়াদ আলম নারায়ণগঞ্জ র্যাব-১১-এ লিখিত অভিযোগ করেন। এর মধ্যে বাবা শামীমও তাঁর ফেসবুক আইডিতে মেয়ের ছবি দিয়ে ‘হারিয়ে গেছে সন্ধান পেলে যোগাযোগ করুন ০১৯৪৬৪৬৮৬১০’ লিখে একটি পোস্ট দেন।
র্যাব তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শামীমের অবস্থান জেনে শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। এরই মধ্যে শামীমের এক আত্মীয় মেয়েটির নানিকে মুঠোফোনে বলেন, শাম্মি জীবিত আছে, এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। শাম্মিকে কাশিয়ানীর খায়েরহাট নিজ বাড়িতে লুকিয়ে রাখার বিষয়টি তাঁর মা ও মামাবাড়ির লোকজন জানতে পারেন। পরে তাঁরা বিষয়টি কাশিয়ানী থানা-পুলিশকে জানান।
কাশিয়ানী থানার এসআই আশুতোষ কুমার বিশ্বাস শিশু উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে শিশুর বাবা তাকে গ্রামের বাড়ি কাশিয়ানীতে এনে লুকিয়ে রেখেছিলেন। খবর পেয়ে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে তাঁর মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মাসহ শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয় ফতুল্লা মডেল থানায়। ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহাগ বলেন, বাবা-মায়ের পারিবারিক কলহের কারণে মেয়েকে লুকিয়ে রাখেন তার বাবা। গতকাল কাশিয়ানী থানার সহযোগিতায় মেয়েটাকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে দেওয়া হয়েছে।
শিশু শাম্মির মা জাহানারা বলেন, ‘আমার স্বামী ফতুল্লায় থাকে। ওই এলাকায় এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করে। ওই নারীর বাসায় একদিন আমার মেয়েকে বেড়াতে নিয়ে যায়। আমার মেয়ে তার বাবাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে আমার কাছে এসে বলে। মেয়ে সত্য কথা বলার কারণে তাকে আর সহ্য করতে পারে না। এ কারণে মেয়েকে লুকিয়ে রেখে হারানোর নাটক করে। গতকাল আমার বুকের ধনকে কাছে পেয়ে বুকটা ভরে গেছে।’