অন্যান্য দলএক্সক্লুসিভবাংলাদেশরাজধানীরাজনীতি

ডঃ কামাল হোসেনের গণফোরামের কাউন্সিলে হামলা

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আজ শনিবার সকালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের কাউন্সিল শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। স্লোগান দিয়ে হঠাৎ মিলনায়তনের ভেতরে ঢোকেন কয়েকজন। এ নিয়ে হইচই, মারধর, কথা-কাটাকাটি ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ১০টায় কাউন্সিল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঘণ্টাখানেক পরে তা শুরু হয়।

আজ সকালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের কাউন্সিল উপলক্ষে নেতা-কর্মীরা মিলনায়তনে আসতে শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাউন্সিল শুরুর আগে সোয়া ১০টার দিকে স্লোগান দিয়ে হঠাৎ মিলনায়তনের ভেতরে ঢোকেন কয়েকজন। তাঁদের কারও কারও হাতে পাইপ দেখা যায়। শুরু হয় হইচই। তাঁদের আক্রমণে কাউন্সিলে আসা কেউ কেউ আঘাত পান। একপর্যায়ে মিলনায়তনে রাখা চেয়ারও ছুড়ে মারেন তাঁরা। অন্যপক্ষ তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ছিঁড়ে ফেলা হয় কাউন্সিলের ব্যানার। শুরু হয় ছোটাছুটি।

এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর গণফোরাম নেতা মোস্তফা মোহসীনের (মন্টু) নেতৃত্বাধীন গণফোরামের কাউন্সিল হয় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। সেখানে মোস্তফা মোহসীনকে সভাপতি ও সুব্রত চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে গণফোরাম দৃশ্যত বিভক্ত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, একপর্যায়ে কয়েকজন ছাড়া কাউন্সিলে আসা কর্মী-সমর্থকেরা মিলনায়তনের বাইরে বেরিয়ে আসেন। সেখানেও দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। হামলাকারীদের ধাওয়ার মুখে পড়েন কাউন্সিলে আসা কেউ কেউ। হামলার শিকার হন কাউন্সিলে থাকা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানসহ কয়েকজন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মিলনায়তনে ১১টায় কাউন্সিল শুরু হয়।

হামলার পর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মোকাব্বির খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্মেলন শুরুর আগমুহূর্তে কিছু দুষ্কৃতকারী সম্মলন পণ্ড করে দেওয়ার জন্য হামলা করে। আইনজীবী মহসীন রশীদের নেতৃত্বে হেলাল উদ্দিন ও আফ্রিক ছিল। তারা ভাড়াটে গুন্ডাদের আনে। তাদের হাতে রড ছিল। তারা অতর্কিত মিলনায়তনে ঢুকে আমাকেও রক্তাক্ত করেছে।

নারীনেত্রী-কর্মীসহ কয়েকজনকে রক্তাক্ত করেছে। প্রায় দুই ডজন নেতা-কর্মীকে রক্তাক্ত করেছে।’সম্মেলনের বিষয়ে পুলিশকে জানানো হলেও হামলার সময় তারা ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ করেন মোকাব্বির খান।

এর আগে মিলনায়তনের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারগুলো স্তূপ করা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মঞ্চের পেছনে ব্যানারও নেই। প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে শাহবাগ থানার পরিদর্শক শেখ আবুল বাশার বলেন, প্রেসক্লাবের ফটকের বাইরে রাস্তায় যেসব মানববন্ধন বা কর্মসূচি হয়, সেগুলোর দিকে তাঁরা নজর রাখেন। ভেতরের অনুষ্ঠানের বিষয়ে খবর রাখেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের কাউন্সিল চলছিল। বাইরেও যুব ফোরামের একটি মানবন্ধন শুরু হয়।

হঠাৎ এই যুব ফোরামের লোকজন ভেতরে চলে আসছিলেন। হঠাৎ হট্টগোল শুনে ভেতরে ঢুকে দেখেন, এক পক্ষের সঙ্গে আরেক পক্ষের চেয়ার–ছোড়াছুড়ি হচ্ছে। পরে জানতে পারেন, তারা (গণফোরামের) অন্য একটি পক্ষের যুব সংগঠন, এখানে হামলা করেছে। পরে তাদের প্রেসক্লাব থেকে বের করে দেওয়া হয়।

বেলা ১১টায় মোকাব্বির খানের সভাপতিত্বে কাউন্সিল শুরু হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুরাইয়া বেগম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আ ও ম শফিক উল্লাহ, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মফিজুল ইসলাম কামাল, আলতাফ হোসেন, এ এইচ এম খালেকুজ্জামান, সগীর আনোয়ার, সেলিম আকবর; সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মোশতাক আহমেদ, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব নূরুজ্জামান প্রমুখ অংশ নেন।সভাপতির বক্তব্যে মোকাব্বির খান বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা, এজেন্টরা দল থেকে এখন পালিয়ে গেছে। এই সভাকক্ষে ও সম্মেলনে যাঁরা আছেন, তাঁরাই প্রকৃত ড. কামাল হোসেনের নীতি–আদর্শের সৈনিক।’

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘অপশক্তি আমাদের কাউন্সিলের শুরুতে আক্রমণ করেছিল। তারা পরাজিত হয়েছে। আমরা কাউন্সিল সফল করেছি।’এরপর ড. কামাল হোসেন, মোকাব্বির খান, মফিজুল ইসলাম কামালসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সাবজেক্ট কমিটির প্রস্তাব করেন মোশতাক আহমেদ।

গণফোরামের সভাপতি হিসেবে ড. কামাল হোসেনের নাম প্রস্তাব করেন মোকাব্বির খান। তিনি বলেন, ‘একটি আবেদন রাখতে চাই। ড. কামাল হোসেন উপস্থিত নেই।তারপরও এই কাউন্সিল থেকে আমি প্রস্তাব রাখতে চাই ড. কামাল হোসেনকে আমরা আবার এই সম্মেলন থেকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তাব রাখছি।’ এ সময় সম্মেলনে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকেরা হাত তুলে ওই প্রস্তাবে সমর্থন জানান।

তখন ড. কামাল হোসেনের একটি চিঠি পড়ে শোনান মোকাব্বির খান। চিঠির ভাষ্য, অসুস্থতার কারণে কামাল হোসেন সশরীর উপস্থিত হতে পারেননি। জাতীয় কাউন্সিলের সমাবেশকে স্বাগত ও আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সফলতা কামনা করেছেন তিনি। চিঠিতে ড. কামাল হোসেন আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি সব সময় ঐক্যের কথা বলেছি। আশা করি, গণফোরামের সব নেতা-কর্মী ও সমর্থক ঐক্যবদ্ধভাবে দল পরিচালনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবেন।’

Back to top button