‘সাকিব নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা যাবেন? কিছু জানেন?’গতকাল রাত থেকেই সাংবাদিকদের মধ্যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। দুই দিন আগে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটিতে যাওয়া সাকিব নাকি হঠাৎই মত পাল্টেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ওয়ানডে-টেস্ট দুটিই খেলবেন তিনি।
আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বোর্ডপ্রধান নাজমুল হাসান ও সাকিব আল হাসানের উপস্থিতি সে গুঞ্জনের পালে হাওয়া লাগায়। যে গুঞ্জন সত্যতা পায় কিছুক্ষণ পরই। যখন সাকিব নিজেই সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন।
সাকিব আল হাসান মানেই যেন নতুন নাটক। অনেক নাটকের পর অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। আজ শনিবার দুপুরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে জরুরী বৈঠরে পর তিনি নিজেকে এই সফরের কথা জানান সাকিব।
এর আগে কয়েকদিন আগে সাকিব জানিয়েছিলেন, তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য তৈরি নন। পরে তার সঙ্গে আলোচনা করে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়ার কথা জানায় বিসিবি। কিন্তু শনিবার বিসিবি সভাপতি পাপন জানালেন, আগামীকাল (রোববার) রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে উড়াল দেবেন সাকিব। খেলবেন টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই।
বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথমে বিসিবি সভাপতি মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে আসেন। পাঁচ মিনিট পর আসেন সাকিব আল হাসান। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস, বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীরা আগে থেকেই ছিলেন। ছিলেন মাহবুব আনাম, ইসমাইল হায়দার ও শেখ সোহেলের মতো আরও কয়েকজন বোর্ড পরিচালক।
জরুরী বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমকে সাকিব বলেন, ‘পাপন ভাইয়ের সঙ্গে পরশু রাতেও কথা হয়েছে, আজও ওনার সাথে কথা হয়েছে। যেহেতু আমি তিন ফরম্যাটেই আছি, তিন ফরম্যাটেই সবসময় এভেইলেবল থাকব। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে কখন আমাকে বিশ্রাম দেওয়া দরকার। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও আমি এভেইলেবল।’
এর আগে নাজমুল হাসান ও সাকিবের বোর্ডে আসার খবর শুনে বিসিবি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের ভিড় বাড়তে থাকে। সবার মনেই প্রশ্ন—কোন পথে এগোচ্ছে সাকিবের ভবিষ্যৎ?ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল। সাকিব ও নাজমুল হাসান—দুজনই একসঙ্গে বেরিয়ে এলেন বেলা আড়াইটার দিকে। নাজমুল হাসান বৈঠকের কারণ জানিয়ে সাকিবকেই তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেন।
উৎসুক সাংবাদিকেরা সাকিবের মন্তব্য শেষ হতে না হতেই তাঁর সিদ্ধান্ত বদলের কারণ জানতে চান। কদিন আগেই তো বলেছেন, খেলার মতো শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় নেই তিনি, এখন তাহলে কীভাবে খেলবেন? সাকিব উত্তর দিলেন, ‘এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছি। যেহেতু আমার সামনে পরিষ্কার চিত্রটা আছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গেলে হয়তো আরও তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অনেক সময় হয় তো, না? ভিন্ন জায়গায় গেলে মানসিক অনেক পরিবর্তন হয়। আশা করি, সে রকম কিছু হবে এবং দলের জন্যও ভালো পারফর্ম করতে পারব।’
সাকিবের বিষয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সব ম্যাচেই এভেইলেবল সাকিব। আগামীকাল রাতে সে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এখানে কথা আছে, এমনও হতে পারে সেখানে কোনো ম্যাচে তাকে দলের বাইরে রাখা হতে পারে। কোউ চাইলে বিশ্রাম নিতেই পারেন।এটা নিয়ে হুলস্থুল করার কিছু নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ১৮ মার্চ থেকে শুরু হবে টাইগারদের প্রথম ওয়ানডে। পরের দুটি যথাক্রমে ২০ ও ২৩ মার্চ। ৩১ মার্চ থেকে ডারবানে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ৮ এপ্রিল থেকে। এক মাসের সফর শেষে ১৩ এপ্রিল টাইগারদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সাংবাদিকদের সাকিব-বিতর্ক বন্ধ করার অনুরোধও জানালেন তিনি, ‘পরশু এসে আমাকে সাকিব যে জিনিসটা বলেছে, ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের সবারই কোনো না কোনো সময় এ রকম হয়। মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকতেই পারে। আপনারা অনেক কারণ বের করে নিচ্ছেন। এটার জন্য করছে, ওটার জন্য করছে…এ রকম কিছু নয়।
সে মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। সে নিজেই স্বীকার করেছে। এটা যখন বলেছে, এরপর আর কোনো কথা নেই। আমাদের পুরো সূচি দেখে বলেছে, আমি সব ফরম্যাটে খেলতে চাই।’বেলা পৌনে চারটার দিকে সাকিবও বিসিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্লাইট কখন? এ প্রশ্ন শুনেই সাকিব মুখে রহস্যময় এক হাসি ফুটিয়ে গাড়িতে উঠে যান।
পুরো সময়টা বিসিবি কার্যালয়ের দেয়ালের ওপারে কয়েকজন উৎসুক ক্রিকেট সমর্থক সাকিব-নাটকের শেষ পর্ব মঞ্চায়ন হতে দেখছিলেন। তাঁদের একজনের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা, ‘কী হচ্ছে ভাই? শেষ পর্যন্ত সাকিব কি দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছে? তাহলে ছুটির কী হলো?’উত্তর তো সাকিব মুখে আগেই দিয়েছেন। আর রহস্যময় ওই হাসি? এর অর্থ শুধু তিনিই জানেন।
ওয়ানডে দল : তামিম ইকবাল খান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন, নাসুম আহমেদ, ইয়াসির আলী, মাহমুদুল হাসান জয় ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
টেস্ট দল : মুমিনুল হক (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল খান, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, ইয়াসির আলী, তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহি, শরীফুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, সাদমান ইসলাম ও কাজী নুরুল হাসান সোহান।