হত্যার শিকার ডালিমের দুই লাশ উদ্ধার নিয়ে তোলপাড়
সিলেটে একটি লাশের আলামত খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল আরেকটি লাশ। মাটিচাপা দেয়া। হাত ও পা বাইরে ছিল। অথচ এই লাশ উদ্ধারের আগেই অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশটিকে জৈন্তাপুরের ঘাটেরচটি গ্রামের রাজমিস্ত্রি ডালিমের বলে দাফন করা হয়েছিল। আর দাফনের পর পাওয়া গেল ডালিমের আসল লাশ। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। দুটি লাশই পাওয়া গেছে আধা কিলোমিটারের মধ্যে।
প্রথম লাশের চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় তারা ধরেই নিয়েছিলেন লাশটি ডালিমের। স্থানীয় চিকনাগুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, দুটি লাশ উদ্ধারের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় লাশটি ডালিমের বলে তার স্বজনরা শনাক্ত করেন। প্রথম লাশটি কার? সেটি নির্ণয় করা যায়নি। পুলিশ দুটি ঘটনারই তদন্ত করছে।
জৈন্তাপুর উপজেলার ঘাটেরচটি গ্রাম। সিলেট সদরের লাগোয়া এই গ্রাম।শহরতলিরও বলা হয়। ওই গ্রামের রাজমিস্ত্রি ডালিম মিয়া গত শনিবার সন্ধ্যার পর নিখোঁজ হন। এরপর তাকে খোঁজাখুঁজি করলেও পাওয়া যায়নি। সোমবার দুপুরের পর খবর আসে এই এলাকার তারেক হাজীর মৎস্য খামারে হাত-পা বাঁধা একটি লাশ ভাসছে। খবর পেয়ে পুলিশও আসে এলাকায়।
স্থানীয় চিকনাগুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে ওই লাশ উদ্ধার করে। লাশটির হাত-পা ছিল বাঁধা।গলায় ছিল আঘাতের চিহ্ন। লাশ উদ্ধারের পর নিখোঁজ ডালিমের পিতা বাচ্চু মিয়া ও ভাইরা উদ্ধার হওয়া দেহটিকে ডালিমের বলে শনাক্ত করেন।
এরপর পুলিশ ওই লাশের ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে স্বজনরা দাফন করেন। এদিকে ওই লাশ দাফনের পর খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নামে পুলিশ। আলামত খুঁজতে এলাকায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। পুলিশের সঙ্গে এলাকার লোকজনও আলামত উদ্ধারে এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছিলেন।
মাটিচাপা দেয়া ডালিমের লাশ উদ্ধারের পর পিতা বাচ্চু মিয়া বুধবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় একই এলাকার ফজর আলী নামে একজনের নাম উল্লেখ করে থানায় এজাহার দিয়েছিলেন। পুলিশ ওই এজাহার আমলে নিয়ে মামলা রেকর্ড করেছে। জৈন্তাপুর থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ জানিয়েছেন, প্রথম লাশটি কার সেটি নিয়ে তদন্ত চলছে।
মঙ্গলবার বেলা দুইটায় তারা স্থানীয় ওয়ালি সিটির নিকটবর্তী একটি জমিতে দুই হাত ও পা বাইরে রাখা আরেকটি লাশ দেখতে পায়। এ সময় পুলিশও সেখানে ছুটে যায়। খবর পেয়ে সেখানে যান ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান। মাটিচাপা দেয়া ওই লাশ উদ্ধার করে তারা দেখতে পান এটি নিখোঁজ হওয়া ডালিমের লাশ।
আগে দাফন করা লাশটি ডালিমের ছিল না। ফলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, ডালিম নামে যে লাশটি দাফন করা হয়েছিল আসলে সেই লাশ ডালিমের নয়। মাটিচাপা দেয়া লাশটি ডালিমের। লাশের গলা কাটা ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে ডালিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করেন তারা। দুইদিন আগে লাশ মাটিচাপা দেয়ায় বাইরে থাকা হাত-পায়ের অংশ শেয়াল-কুকুর খুবলে খেয়েছে।
মাটিচাপা দেয়া অবস্থা থেকে উদ্ধারের পর ডালিমের পিতা ও ভাইরা লাশটি ডালিমের বলে শনাক্ত করেন। এলাকার মানুষও পুলিশকে অবগত করেন শেষে উদ্ধার হওয়া লাশটি ডালিমের। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে একই কবরস্থানে ডালিমের মরদেহ দাফন করা হয়।
এদিকে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়া মাত্র চাঞ্চল্য দেখা দেয়। এক ডালিমের দুই লাশ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। তবে ডালিমের পিতা বাচ্চু মিয়া নিশ্চিত করেছেন- উদ্ধার হওয়া দ্বিতীয় লাশটি ডালিমের। শনিবার ডালিম একই এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। এরপর বাড়ি ফিরেও আসে। পরে কাজে গিয়ে নিখোঁজ হন ডালিম।