ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়া ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের হামলা চালাতে পারে। অন্যদিকে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনে জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনায় ওই অস্ত্রের উন্নয়ন গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র অর্থায়ন করছে। বৃহস্পতিবার মস্কোর পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ক্রেমলিন ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা প্রচার করছে। রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের ভয়ংকর কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দিতে মিথ্যা অজুহাত দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকিও। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জীবাণু অস্ত্র গবেষণাগার এবং ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি নিয়ে রাশিয়ার দাবি অযৌক্তিক। তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া এখন এসব মিথ্যা দাবি করছে এবং মস্কোর এসব প্রচারণায় সমর্থন দিচ্ছে চীন।
রাশিয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে মস্কোর অভিযোগ এটা ইঙ্গিত দেয় যে রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের হামলার পরিকল্পনা করছে।রাশিয়া এসব মিথ্যা দাবি করে ইউক্রেনে জীবাণু অস্ত্র বা রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে পারে। তাই রাশিয়ার সম্ভাব্য এই হামলা নিয়ে আমাদের সবার সতর্ক ও সাবধান থাকা উচিত।’
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রুশ বাহিনী যাতে ইউক্রেনের জৈব গবেষণাসামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে না পারে, সে লক্ষ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করবে তারা।রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ একট টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইউক্রেনে পেন্টাগনের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণার লক্ষ্য ছিল মারাত্মক রোগজীবাণু ছড়াতে একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
এর আগে গত বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনে সেনারা প্রায় ৮০ টন অ্যামোনিয়া দেশটির খারকিভ শহরের জোলোচিভে স্থানান্তর করেছে। ৬ মার্চ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইট করে জানায়, মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত জীবাণু অস্ত্রের চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছিল কিয়েভ। রাশিয়ার সেনারা তার প্রমাণ পেয়েছে।
কোনাশেনকভ দাবি করেন, ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক-জৈবিক কার্যকলাপের নথি পেয়েছেন তাঁরা। এসব নথির মধ্যে ইউক্রেনের জৈব উপাদান বিদেশে স্থানান্তরের বিষয়টিও রয়েছে।রাশিয়া ২০১৮ সালে জর্জিয়ার একটি ল্যাবে গোপনে জীবাণু অস্ত্র পরীক্ষা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল। ওয়াশিংটন ও কিয়েভ উভয় দেশেই জীবাণু অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যে গবেষণাগার থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
পশ্চিমারা এটাকে রাশিয়ার ‘মিথ্যা অজুহাত’ বলে উড়িয়ে দেয়। তবে একটি সংস্থার প্রতিনিধির বরাত দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাস, আরআইএ, ইন্টারফ্যাক্সের খবরে বলা হয়, পরিত্যক্ত চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পারমাণবিক অস্ত্র ডার্টি বম্ব তৈরি করছিল ইউক্রেন। ওই বোমা তৈরির প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল দেশটি।
কিয়েভের বিরুদ্ধে মস্কোর মারণাস্ত্র তৈরির অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। গত রোববার অজ্ঞাতনামা একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘ডার্টি বম্ব’ বা পারমাণবিক বোমা তৈরির অভিযোগ করে। বলা হয়, ইউক্রেন ওই বোমা তৈরির একবারে দ্বার প্রান্তে ছিল। তবে সূত্রটি ওই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০০০ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। বোমা তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। ১৯৯৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পারমাণবিক অস্ত্র সমর্পণ করেছিল ইউক্রেন। এরপর থেকে তারা আর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেনি।