দামি মোটরসাইকেল ছাড়া চুরি করে না চক্রের সদস্যরা। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে সপ্তাহে অন্তত দুটি মোটরসাইকেল চুরি করে। গত তিন বছরে শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে চক্রটি। একটি মোটরসাইকেল চুরি করতে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মিনিট সময় নেয় তারা।
চক্রের তিন সদস্যের একজন মোটরসাইকেল পাহারায় মালিকের গতিবিধি লক্ষ্য করে। তারপর সুযোগ সুবিধামতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে লক ভেঙে সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে একটি দামি মোটরসাইকেল চুরির পর চক্রের সন্ধানে নামে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি টিম। চক্রের একাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার শেষে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে অনেক তথ্য।
ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ওই চোর চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। চক্রটির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ১০টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের মোল্লার চর, সিপাহী পাড়া, বেতকা, মুক্তারপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১০টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
ডিবি জানায়, চক্রের মূলহোতা মশিউর রহমান ওরফে মিশু আগে দর্জি পেশায় ছিলেন। ওই পেশায় আয় কম হতো। সহজে বড়লোক হওয়ার জন্য মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে নিজেই গড়ে তুলে একটি চক্র। তাদের মধ্যে নাজিম শেখ হচ্ছেন পেশায় একজন গ্রামপুলিশ। চক্রটির টার্গেট প্রতি সপ্তাহে দামি দেখে দুই থেকে তিনটি মোটরসাইকেল চুরি করা।
গত তিন বছরে প্রায় শতাধিক গাড়ি চুরি করেছে চক্রটি। চক্রের একজন সদস্য ঘটনাস্থলে গাড়ির মালিককে নজরদারি করে। এরপর কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তালা ভেঙে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটিতে এক যুবক তার বন্ধুকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে সুযোগ বুঝে চক্রটি মোটরসাইকেলটি চুরি করে পালিয়ে যায়।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, চক্রটির টার্গেট হচ্ছে দামি মোটরসাইকেল। অভিজাত এলাকাগুলোতে টার্গেট করে। পরবর্তীতে নকল চাবিসহ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ির লক ভেঙে নিয়ে পালিয়ে যায়। গত তিন বছরে চক্রটি শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকারও বেশি।
সূত্র জানায়, রাজধানীর শাহবাগ ও বংশাল এলাকায় গাড়ি চোর চক্রের কতিপয় সদস্য চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় করে। তাদের সঙ্গে থাকা নকল চাবি দিয়ে মোটরসাইকেলের ঘাড় লক ভেঙে মোটরসাইকেল চালু করে সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর রনি চোরাই মোটরসাইকেলগুলো কিছুদিন তাদের হেফাজতে রেখে গ্রামের মানুষের কাছে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা দামে বিক্রয় করে।
তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, টিএসসি চত্বর, নগর ভবন, গুলিস্তান, ধানমণ্ডি লেক, কাঁচপুর, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা রয়েছে।