থানার সামনে রাস্তার দুপাশে কয়েক শ মানুষের অপেক্ষা। তাঁদের নেতাকে আদালত থেকে থানায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সন্ধ্যায় দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি আর একটি মাইক্রোবাস থানা চত্বরে প্রবেশ করে। গাড়িগুলোর একটির মধ্যে বসে থাকা এক ব্যক্তি সবাইকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর গাড়ি থেকে নেমে পুলিশের হ্যান্ডমাইকে সবার উদ্দেশে তিনি কিছু কথাও বলেন।
মামলার বাদী মিল্টন খন্দকার অভিযোগ করেন, আসামিকে ‘জামাই আদরে’ আদালত থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে থানায় আনা হয়। তাঁর ছিল না কোনো হাতকড়া। পুলিশ তাদের হ্যান্ডমাইক আসামির হাতে তুলে দিয়ে যেভাবে বক্তৃতা দেওয়ালো, তাতে তিনি হত্যার বিচার পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তিনি আসামির সঙ্গে পুলিশের এমন আচরণের তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করেন।
ওই ব্যক্তি ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম। হত্যা মামলার আসামি তিনি। আদালত তাঁকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। এ কারণে তাঁকে গতকাল মঙ্গলবার থানায় আনা হয়। হ্যান্ডমাইকে আসামির কথা বলার বিষয়ে পুলিশ বলে, শিমুলকে থানায় আনা হচ্ছে, এ খবরে থানার সামনে কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হন। তাঁদের সরাতেই আসামিকে দিয়ে কর্মীদের বাড়ি ফেরার আহ্বান জানানো হয়।
পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের একজন শফিকুল ইসলাম। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে নির্বাচনের পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগে নানা রকম বিরোধ দেখা দেয়। যার জেরে গত ৮ জানুয়ারি প্রকাশ্যে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় কল্লোল খন্দকার নামের এক যুবককে। তিনি বগুড়া গ্রামের মৃত আকবর খন্দকারের ছেলে।
পুলিশ আফান আলী ও সজীব হোসেন নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। আসামি শফিকুল ইসলাম, নাসির বিশ্বাস, ফরিদ মুন্সি, আতিয়ার মিয়া ও আখির মুন্সি ২ মার্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামি শফিকুলসহ অন্যদের মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদালত থেকে পুলিশি পাহারায় শৈলকুপা থানায় নিয়ে আসা হয়।
এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার ১২ জানুয়ারি ৮২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় চেয়ারম্যান শফিকুলকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর বাদী একাধিকবার অভিযোগ করেন, আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা নেই। বাদী তার পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
থানায় আসামিদের আনার আগে থেকেই সেখানে নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্যে হাজারের বেশি কর্মী-সমর্থক থানার সামনে হাজির হলে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়। পরে আসামিরা আসার পর শফিকুল ইসলামকে দিয়ে সবাইকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করতে তাঁর হাতে হ্যান্ডমাইক তুলে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) বলেন, আসামিদের কারও ব্যক্তিগত গাড়িতে আনা হয়নি। গাড়িগুলো ভাড়া নেওয়া ছিল। আসামিদের হাতে হাতকড়া না থাকা এবং পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেওয়া প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ঘটনার সময় প্রায় দুই হাজারের বেশি জনতা জোটবদ্ধ হয়ে থানার সামনে হট্টগোল শুরু করে। তখন পরিস্থিতি শান্ত করতে আসামির হাতে হ্যান্ডমাইক তুলে দিয়ে তাঁকে দিয়েই উপস্থিত জনতাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এর বাইরে আসামি কোনো বক্তৃতা করেননি বলে ওসি দাবি করেন।
আসামি শফিকুল ফটকের ভেতরে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইকে সবার উদ্দেশে বলেন, তিনি আইনের হেফাজতে আছেন। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। ঘটনার সময় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গেই একটি কর্মসূচিতে ছিলেন। ফলে তিনি নির্দোষ, তাঁর ওপর কোনো অন্যায় করা হবে না। তিনি কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে বলেন। অন্যায় হলেও শান্তি বজায় রাখতে বলেন তিনি।
ঝিনাইদহ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইসমাইল হোসেন বলেন, এভাবে বক্তৃতা দেওয়া যাবে, এমনটি কোনো আইনে নেই, আবার নিষেধও নেই। তবে পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে বলে তিনি জানান।