রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনের অধিকাংশ এলাকা দখলে নিলেও লড়াই চালিয়ে যেতে পশ্চিমারা প্রবাসে ইউক্রেন সরকার গঠনের চিন্তাভাবনা করছে। পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকর্তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এই লড়াই হতে পারে গেরিলা যুদ্ধ।কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র পাঠিয়েছে, যা সামনের দিনগুলোতেও বজায় রাখবে। গেরিলা যুদ্ধের সফলতার জন্য এই অস্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ।বাইডেন প্রশাসন ইতিমধ্যে ইউক্রেনে মানবিক ও সামরিক সহায়তার জন্য ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড় দিতে কংগ্রেসকে অনুরোধ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রসদ ও মনোবল ঘাটতিতে থাকা রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। কিন্তু যুদ্ধ মাত্র দুই সপ্তাহে গড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কর্মকর্তারা মনে করছেন, রুশ বাহিনী প্রাথমিক দিককার ক্ষতি শিগগিরই সামলে নেবে এবং এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি রক্তাক্ত লড়াই শুরু হবে।
এ ক্ষেত্রে গড়ে ওঠা ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার জন্য পরিকল্পনা করছে পশ্চিমারা। কর্মকর্তারা সেই পরিকল্পনার বিস্তারিত না জানালেও কিয়েভের সম্ভাব্য পতন বিবেচনায় নিয়েই তাঁরা ইউক্রেনের প্রবাসী সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিতে শুরু করেছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যদি গেরিলা যুদ্ধকে সমর্থন দেয়, তাহলে রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনে নাগরিকদের মনোবল ধরে রাখতে এবং শত্রু রুশ সেনাদের প্রতিহত করতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হবেন প্রধান শক্তি।
এর আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়া তাঁকে এক নম্বর লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। তিনি কিয়েভেই আছেন, দেশ ছাড়বেন না। জেলেনস্কির জন্য নিরাপদ স্থান পোল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি লিভ শহরে যাওয়া উচিত কি না, সে বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর আলোচনাও হয়েছে।
ইউক্রেনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলছেন, জেলেনস্কির নিরাপত্তা বিবেচনায় তাঁকে এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের দ্রুত অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তিনি কিয়েভ ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।রুশ বাহিনীর হাতে কিয়েভ পতনের বিষয়টি ধরে নিয়েই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সামরিক দপ্তর পেন্টাগনসহ অন্য সংস্থাগুলো যেসব পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, তার মধ্যে জেলেনস্কি সরকারের দেশ ছাড়ার বিষয়টিও রয়েছে।
স্পর্শকাতর বিষয় বিবেচনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি ঘটনার জন্য সম্ভাব্য পরিকল্পনা তৈরি করছি। এর মধ্যে পোল্যান্ডে জেলেনস্কির প্রবাসী সরকার গঠনের বিষয়টিও রয়েছে।’রুশ বাহিনী কিয়েভ দখল করলে ইউক্রেন সরকার কী করবে, সেই পরিকল্পনার কথা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক।
তিনি বলেন, ‘রুশ বাহিনীর কিয়েভ আক্রমণের মুখে ইউক্রেন প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লড়াই ইউক্রেনের মানুষের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের অবশ্যই যুদ্ধে জিততে হবে। আর কোনো উপায় নেই।’ইউক্রেনের বিরোধী দল ইউরোপীয় সলিডারিটি পার্টি থেকে নির্বাচিত সাংসদ ভলোদিমির আরিয়েভ বলেন, ‘যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও অনেক আইনপ্রণেতা কিয়েভে রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলে এখনো শহর ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। কারণ, আমরা হাল ছাড়ছি না। আমরা সরকারে নেই কিন্তু আমাদের অস্ত্র আছে। আমরা জনগণের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।’ কিয়েভের পতন হলে বা পুরো ইউক্রেন রাশিয়ার দখলে গেলে দেশটির সরকারকে কীভাবে সমর্থন দেবে, তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা।
ইউরোপের একজন শীর্ষ কূটনীতিক বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা জানিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব আনা হয়। সেখানে জেলেনস্কির সরকারকে বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। প্রবাসী সরকারের ভিত্তিও এতে রচিত হয়েছে।