ঝিনাইদহে রেনুকা খাতুন নামে এক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া ‘জিনের বাদশা’ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম।শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিশ্বনাথপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুক্তভোগী রেনুকা খাতুন বলেন, প্রথমে প্রতারক চক্র মোবাইলে রাতে ফোন করে মা বলে ডেকে জিনের বাদশা পরিচয় দেয়। আমার কোনো সন্তান নেই বলে তাকে বাবা বলে ডাকতে বলে। এরপর কোরআন হাদিস সম্পর্কে অনেক কথা বলে। তখন তাকে বিশ্বস করি। সে বলে আপনি অনেক ভাগ্যবান, আল্লাহর তরফ থেকে আপনাকে বড় সম্পদ দান করা হয়েছে।
বাড়ির পেছনে পুকুরে ৭ কলসি স্বর্ণ রাখা আছে। সেগুলো পেতে হলে হাদিয়া স্বরুপ একটি জায়নামাজের পাটি দিতে হবে। যার দাম ৫৬০ টাকা। এ কথা বলে একটি নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলে। তখন সরল বিশ্বাসে টাকা পাঠিয়ে দিই।
গ্রেপ্তাররা হলেন- গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার বিশ্বনাথপুর গ্রামের মিন্টু পোদ্দারের ছেলে মো. রায়হান (২৫), মো, তুহিন (২৩), মো. আজল হকের ছেলে মো. জিয়াউর (২২) ও শাকপালা গ্রামের শ্রী নারায়ণ দাসের ছেলে মিলন দাস (৩৫)। তারা এর আগে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, ঝিনাইদহ শহরের খাজুরা গ্রামের এক নারীকে সাত কলসি স্বর্ণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত তিন মাসে চার ভরি স্বর্ণালংকারসহ ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে ওই নারী গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেন।
মামলার পর জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে প্রতারকদের চিহ্নিত করে। পরে অভিযান চালিয়ে গোবিন্দগঞ্জের দুর্গম এলাকা থেকে রায়হান, তুহিন, জিয়াউর ও মিলন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুক্তভোগী রেনুকা খাতুন আরও বলেন, ওই প্রতারক পুররায় ফোন করে স্বর্ণের কলস ও হাদিয়ার বিষয়ে কাউকে বললে সন্তানদের মুখ দিয়ে রক্ত বমি হয়ে মারা যাওয়ার ভয় দেখায়। এরপর বলে- আরাপপুর ডাচ বাংলা ব্যাংকের পেছনে একটি স্বর্ণের পুতুল আছে। সেটা নিতে হলে তোকে কিছু স্বর্ণ দিতে হবে।
আমার দেওয়া স্বর্ণগুলো পুকুরে থাকা সাত কলসির মধ্যে রাখা হবে। তখন আমি চার ভরি স্বর্ণ নিয়ে ওখানে রেখে দিয়ে একটা স্বর্ণের পুতুল নিয়ে আসি। তখন আমার বিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। এরপর বিভিন্ন ছলনা করে আমার থেকে চার ভরি স্বর্ণের গহনাসহ মোট ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনাগুলো স্বামীসহ পরিবারের কাউকেই জানায়নি। প্রতারিত হওয়ার পর ভাইয়ের সহযোগিতায় থানায় মামলা করলে পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে।