রোমানিয়ায় পাঠানোর কথা বলে সিলেটে প্রায় ৩০০ যুবকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের (ট্রাভেল এজেন্সি) বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাঁদের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক। টাকা ফেরতের দাবিতে আজ শনিবার বিকেলে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় হক সুপার মার্কেটের আমিন রহমান ট্রাভেলসে ভিড় জমান ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁরা।
ভুক্তভোগী সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরিচিত একজনের মাধ্যমে ভারতের রোমানিয়া দূতাবাসে ভিসার কপি পাঠিয়ে যাচাই করিয়ে জানতে পারেন, ভিসাটি ভুয়া। এরপর ট্রাভেল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বুঝিয়ে বলেন, ভিসাটি আসল। কিন্তু শনিবার সিলেটে আসার পর ট্রাভেল মালিককে পাচ্ছেন না। প্রায় ৩০০ যুবকের সঙ্গে এমন প্রতারণা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী তিন যুবক বলেন, প্রায় ৩ মাস আগে ৯০ দিনের মধ্যে রোমানিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় ‘আমিন রহমান ট্রাভেলস’। বিজ্ঞাপন দেখে ট্রাভেলসে যোগাযোগ করেন তাঁরা। সে সময় ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমান জানান, বিজ্ঞাপনে লেখা হয়, রোমানিয়ায় যেতে হলে ছয় লাখ টাকা লাগবে।
প্রথমে বুকিং মানি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ও ওয়ার্ক পারমিট আসার পর দিতে হবে আরও ৫০ হাজার টাকা। বাকি পাঁচ লাখ দিতে হবে ভিসা হওয়ার পর। এসব কথা শুনে রোমানিয়ায় যেতে আগ্রহীরা লিখিত চুক্তি করে টাকা দেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে ৫০ হাজার ও ওয়ার্ক পারমিট আসার কথা বলে আরও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় ট্রাভেল প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময়ে ভিসা হয়ে যাওয়ার কথা বলে পুরো টাকাও নেওয়া হয়েছে কয়েকজনের কাছ থেকে।
যুবকেরা বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রোমানিয়ায় ফ্লাইট দেওয়া শুরুর কথা বলেছিলেন ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমান। কিন্তু ওই দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে কারও ফোন ধরেননি তিনি। বিকেল থেকে মুঠোফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেন আমিন রহমান। পরে অনেক খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁদের পাসপোর্টে লাগানো ভিসা জাল। এ ছাড়া অনেককে ভিসা হওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া পাসপোর্টও ফেরত দেননি ট্রাভেলসের মালিক।
মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি রোমানিয়ায় ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল তাঁর। এ জন্য আগের দিন ঢাকায় গেলেও ট্রাভেল মালিকের মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে সিলেটে ফিরতে হয়েছে। তিনি জানান, ইউরোপে যাওয়ার জন্য বাড়ির জায়গা বিক্রি করে প্রায় সাত লাখ টাকা দিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে ট্রাভেল এজেন্সির মালিক আমিন রহমানের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেলেও এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেননি। ভুক্তভোগী কেউ লিখিত আভিযোগ করলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।