আইন-আদালতএক্সক্লুসিভপরিবার ও দাম্পত্যবাংলাদেশমেহেরপুর

গুম খুন হওয়া রাকিব ৫ বছর পর উদ্ধার

মেহেরপুরে ‘খুনের পর লাশ গুমের’ শিকার রাকিবুজ্জামান রিপনকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে মেহেরপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাঁকে বাবার জিম্মায় দেন। রাকিবকে খুন করে লাশ গুম করা হয়েছে, এমন অভিযোগে তাঁর বাবা আদালতে মামলা করার পাঁচ বছর পর গত রোববার বিকেলে তাঁকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে উদ্ধার করে পিবিআই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, গাংনী থানার পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। ২০২০ সালে প্রথম মামলাটি তদন্ত করেন পিবিআইয়ের কর্মকর্তা মেহেদি হাসান। পরের বছর মামলাটি তাঁর কাছে যায়।

পিবিআই কুষ্টিয়ার পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, রাকিবুজ্জামান রিপন ২০১৭ সালের ৪ জুলাই গাংনী উপজেলার ভরাট গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। রিপনের বাবা মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন।

মামলায় তিনি ছেলেকে খুনের পর লাশ গুম করার অভিযোগ আনেন। মামলায় রাকিবের শ্বশুর বাদশা মিয়া, শাশুড়ি সফিরন খাতুন, চাচা শ্বশুর হারেজ আলী ও স্ত্রী শ্যামলী খাতুনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি গাংনী থানার পুলিশকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

পুলিশ জানায়, পাঁচ বছর ধরে রাকিবুজ্জামান রিপন পরিচয় গোপন করে গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছিলেন। নাম বদলে শরিফুল ইসলাম নাম ধারণ করেন। সেখানে তিনি মোছা. শিমলা আক্তার নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। এই সংসারে তাঁদের ছয় মাসের একটি ছেলে আছে। ঠিক কী কারণে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন, এ বিষয়ে পুলিশ কিছু বলতে পারেনি।

পরিদর্শক মনিরুজ্জামান আরও বলেন, নিখোঁজ রাকিবুজ্জামান রিপনের ছবিসহ একটি বিজ্ঞপ্তি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে তিনি তাঁর নিজের ফেসবুকে ‘এই ব্যক্তির সন্ধান চাই’ বলে একটি পোস্ট দেন। সেখান থেকে একটি সূত্র পাওয়া যায়। ওই সূত্র ধরে প্রথমে খুলনা ও পরে সিরাজগঞ্জে রাকিবের ছবি নিয়ে খোঁজ শুরু হয়।

একপর্যায়ে রাকিবের মতো দেখতে এক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায় গাজীপুরের শ্রীপুরে। এনজিওর ঋণ দেওয়া ব্যক্তির পরিচয়ে তিনি রাকিবের সঙ্গে কথা বলেন। জানতে পারেন, একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করছেন শরিফুল ইসলাম নামে। বাবার নাম দেওয়া আছে সিরাজুল ইসলাম। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি স্বীকার করেন, তাঁর প্রকৃত নাম রাকিবুজ্জামান রিপন।

আজ আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন রাকিবের প্রথম স্ত্রী শ্যামলী খাতুন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে বাড়ি থেকে টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে উধাও হয়ে যান রাকিব। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। রাকিব যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যান, তখন তাঁদের ছেলের বয়স ছিল ছয় মাস। এক দিনের জন্যও যোগাযোগ করেননি, এখন ছেলেকে নিতে চাইছেন।

রাকিবের বাবা মনিরুল ইসলাম বলেন, পাঁচটি বছর ছেলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এ কারণে পরিবারের সবাই মনে করেছিলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ছেলেকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলেছেন। এ কারণে মামলা করেছিলেন। এখন যখন ছেলেকে পাওয়া গেছে, তাই মামলাটি তুলে নেওয়া হবে।

Back to top button