চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না করায় সার্চ কমিটির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনার (ইসি) পদে নিয়োগের জন্য সম্ভাব্য ১০ ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, প্রস্তাবিত নামের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়েছেন।
কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না করে গোপন রাখতে চাওয়ায় সার্চ কমিটির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরপর তালিকা নিয়েও উঠতে পারে নানা প্রশ্ন। এদিকে ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করতে আজ মঙ্গলবার শেষবারের মতো বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সার্চ কমিটি।
সার্চ কমিটি চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশকৃত নাম প্রকাশ করতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন।তিনি বলেন, আইনের ভাষ্য অনুযায়ী নাম প্রকাশ করতে বাধা নেই এ কথা যেমন ঠিক, তেমনি প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতার বিষয়ও উল্লেখ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাম প্রকাশ হলে নিশ্চয়ই ভালো হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
নাম প্রকাশ করার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ও সার্চ কমিটির সভাপতি ওবায়দুল হাসান সোমবার বলেন, নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তটি আমাদের কমিটির বৈঠকে নেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে কথা বলেছি। তাই আর মন্তব্য করতে চাই না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে সাংবাদিকরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিকের মতে, নাম প্রকাশ না হলে দেশের ক্ষমতার মালিক অর্থাৎ নাগরিকরা যে দাবি ও প্রত্যাশা করছিল সেটা অবাস্তবায়িত থেকে যাবে।তিনি বলেন, দশ জনের নাম প্রকাশ করা হলে সার্চ কমিটির কার্যক্রমের ওপর বেশিরভাগ নাগরিকের আস্থা থাকবে বলে আমার মনে হয়। এর মাধ্যমে নবগঠিত কমিশনও জনমানুষের আস্থা অর্জনের পথে এগিয়ে থাকবে।
সার্চ কমিটি যদি যোগ্যদের সুনামের বিষয়টি শুধু নিজেরাই বিবেচনা করেন তবে এত কিছু (বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক, আলোচনা) আয়োজনের মূল স্পিরিটটাই থাকে না। তিনি বলেন, প্রথম তালিকা প্রকাশ করে সার্চ কমিটি ভালো কাজ করেছে।
এখন সবার আগ্রহ চূড়ান্ত তালিকায়। এখানে যারা স্থান পেয়েছেন তাদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার অন্তত তিন দিন আগে যদি প্রকাশ করা হয় তবে কমিটির কাজে গ্রহণযোগ্যতা অনেকগুণ বাড়বে।
নাম প্রকাশ করার বিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, তালিকা প্রকাশ না করলে আইনে বর্ণিত স্বচ্ছতা রক্ষা হয় না।এছাড়া নাম প্রকাশ করলে বিব্রত হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনে বলা হয়েছে ‘সুনাম বিবেচনা’ করে যোগ্যদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করতে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রথমবারের মতো আইন করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ছয় সদস্যর অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি।
আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্যদের নাম প্রস্তাব করতে সার্চ কমিটির হাতে ১৫ কার্যদিবস অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে।এদিকে গত রোববার পর্যন্ত হওয়া নয়টি বৈঠক শেষে সার্চ কমিটি ১২-১৩ জনের নামের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে। আজ সর্বশেষ বৈঠকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
সার্চ কমিটিতে মতামত দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ‘প্রজন্ম-৭১’-এর সভাপতি এবং শহিদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান আসিফ মুনীর। তিনি বলেন, কার নাম কে প্রস্তাব করেছেন সেটা প্রকাশ না করাই ভালো। কিন্তু যেসব নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করা হচ্ছে তা প্রকাশ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, নাম প্রকাশ করতে সমস্যা দেখি না।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এমকে রহমান বলেন, আইনে নাম প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়নি। কমিটি চাইলে নাম প্রকাশ করতেও পারে, নাও পারে। যেহেতু তারা এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রাখতে চাচ্ছেন তাতে আইনের ব্যত্যয় হয় না।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানার চেষ্টা করলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ফোন ধরেননি। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত তালিকায় যে দশজনের নাম থাকবে তারা জাতীয়ভাবে সম্মানী মানুষ।এদের সবাই নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাবেন না। তাই তাদের নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তটিকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখা উচিত।