চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কোমল পানীয়র সঙ্গে নেশাদ্রব্য মিশিয়ে খাইয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের ভিডিও ধারণ এবং মারধরের অভিযোগ করেছেন ওই নারী।অভিযুক্ত ফুহাদ আল মতিন উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ উল্যাহ পাটোয়ারী।

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় বিমা কোম্পানিতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার পাল্লাবাজারে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ওই তরুণী।

তিনি অভিযোগ করেন, ধর্ষণের সময় তাঁকে মারধর করে ভিডিও ধারণ করে ওই বিমা কোম্পানির এজেন্ট।ওই তরুণীকে রাস্তায় অসুস্থ অবস্থায় পেয়ে এক সিএনজি অটোরিকশাচালক জেলা সদরের সুধারাম থানায় নিয়ে যান। এরপর সুধারাম থানার পুলিশ তাঁকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

গৃহবধূ জানান, পরিবারের সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিলেন। তার একটি সন্তান রয়েছে। এক বছর আগে মতিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রে পারিবারিক সমস্যা থাকায় তার কাছে একটি চাকরির কথা বলেন গৃহবধূ। মতিন নিজেকে ‘বড়মাপের’ একজন নেতা দাবি করেন।

পরবর্তীতে গৃহবধূর কাছ থেকে একটি জীবন বৃত্তান্ত জমা নেন তিনি। রোববার সকাল ১০টায় গৃহবধূকে পাল্লা বাজার তার কার্যালয়ে আসতে বলেন মতিন। সেখানে গেলে প্রথমে তাকে নাশতা দেওয়া হয়, পরে নেশাদ্রব্য মেশানো কোমল পানীয় খাইয়ে ধর্ষণ করেন মতিন। তার এক সহকারী ভিডিও ধারণ করেন। কাউকে কিছু বললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

ধর্ষণের পর গৃহবধূকে অটোরিকশায় করে চাটখিল ও পাল্লা বাজারের মাঝামাঝি জায়গায় নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে এক সিএনজিচালক গৃহবধূকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, অভিযুক্তকে আটক করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই তরুণী বলেন, উপজেলার পাল্লাবাজার এলাকার একটি বিমা কোম্পানির এজেন্ট তাঁর পূর্বপরিচিত ছিলেন। ওই ব্যক্তি নিজেকে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা বলে পরিচয় দেন। বেশ কিছুদিন আগে ওই তরুণী তাঁর পারিবারিক অসচ্ছলতার কথা জানিয়ে ওই ব্যক্তিকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। গতকাল শনিবার ওই এজেন্ট তাঁকে ফোন দিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে পাল্লাবাজারে বিমা কোম্পানির কার্যালয়ে আসতে বলেন। সে অনুযায়ী তিনি (তরুণী) আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে যান।

চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, উপজেলার পাল্লাবাজারে একটি বিমা কোম্পানির এজেন্ট তাঁর কার্যালয়ে এক তরুণীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন বলে খবর পেয়েছেন তাঁরা। নির্যাতিত তরুণীর সঙ্গে কথা বলার জন্য হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরতে থানা-পুলিশ কাজ শুরু করেছে।

সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দুপুরে চাটখিলের এক তরুণী অসুস্থ অবস্থায় থানায় এসে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন। চিকিৎসার জন্য ওই তরুণীকে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। একই সময়ে বিষয়টি তাঁরা চাটখিল থানাকে জানান। ঘটনাটি যেহেতু চাটখিল থানায়, এ বিষয়ে সেখানেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তরুণী অভিযোগ করেন, বিমা কার্যালয়ে ঢোকার পর ওই এজেন্ট তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। তখন সেখানে অপরিচিত আরেকজন ব্যক্তিও ছিল। একপর্যায়ে ওই এজেন্ট তাঁর (তরুণীর) জন্য দোকান থেকে নাশতা ও পানীয় আনান। পানীয় খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর পুরো শরীর ঝিমঝিম করতে থাকে এবং তিনি অনেকটাই শক্তিহারা হয়ে যান।

এরপর ওই এজেন্ট ও তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যক্তি তাঁকে মারধর করেন এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলেন। এক পর্যায়ে বিমা কোম্পানির এজেন্ট তাঁকে ধর্ষণ করেন। এ সময় সহযোগী ব্যক্তিটি মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। ঘটনাটি কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়ে তাঁর (তরুণীর) মুঠোফোন ও টাকাসহ ব্যাগ রেখে দিয়ে তাঁকে একটি রিকশায় তুলে দেন তাঁরা।

তরুণী জানান, নির্যাতনে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক তাঁকে সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করেন। নিরাপত্তার কারণে তিনি চাটখিল থানায় না গিয়ে জেলা সদরে সুধরাম থানায় যান। সেখানকার পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাল্লাবাজার থেকে চাটখিল উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো ওই তরুণী তাঁকে ইশারা দিয়ে গাড়ি থামাতে বলেন। এরপর তরুণীর অনুরোধ অনুযায়ী তাঁকে জেলা শহরে নিয়ে আসেন। আসার সময় তরুণী তাঁর ওপর নির্যাতনের কথা তাঁকে জানিয়েছেন।

Exit mobile version