লালমাটিয়ার শেখ কামাল স্কুলের সামনে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে নষ্ট মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করতেন হাবিব শেখ (২৭)। ফেরিওয়ালাসহ অন্যদের কাছ থেকে পুরোনো, নষ্ট মোবাইল কিনে ঠিক করে বিক্রি করতেন তিনি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁর বাসা থেকে পল্লবী থানার পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। ধরে নিয়ে থানায় অমানুষিক নির্যাতন করে তাঁকে মাদক মামলায় জেলে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হাবিব শেখের স্ত্রী সাথী আক্তার।
আজ রোববার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ জানান তিনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন পল্লবী থানার এসআই কাজী রায়হানুর রহমান ও এএসআই মাহাবুব। টাকা দিতে না পারায় তাঁর স্বামীকে অমানুষিক নির্যাতন করেন তাঁরা।
সাথী আক্তার আরও বলেন, ‘আমি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পল্লবী থানায় গেছিলাম। সেখানে আমি কোনো সহযোগিতা পাইনি। ওসির সঙ্গেও দেখা করতে দেয়নি। উল্টো ঘটনার কয়েক দিন পরে একজন অপরিচিত লোক রাস্তায় আমাকে বলে, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে এলাকায় থাকতে পারবা? ওনার পরিচয় জানতে চাইলে উনি দেন নাই।’
সাথী আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী সেদিন বাসায় বসেই মোবাইল ঠিক করার কাজ করতেছিল। তখন পুলিশের সোর্স মিজান, পল্লবী থানার এসআই কাজী রায়হানুর রহমান ও এএসআই মাহাবুব বাসায় এসে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। আমরা ১০ হাজার টাকা নিয়ে থানায় গেলে তারা ৩ লাখ টাকা চায়। নয়তো হেরোইনের মামলা দেবে বলে হুমকি দেয়।’
সাথী বলেন, ‘আমি আমার শাশুড়িসহ কয়েকজন থানায় গেলে তারা আমার স্বামীকে নির্যাতন করতে থাকে। তার হাতে হাতকড়া লাগানো ছিল। আমার সামনে আমার স্বামীর বিশেষ অঙ্গে বারবার আঘাত করতেছিল। তার হাতে-পায়ে লাঠি দিয়ে মারতেছিল। আমি বলছি, হেরোইন পান নাই, আপনারা হেরোইনের মামলা কেন দেবেন?’
তিনি আরও অভিযোগ করে জানান, টাকা দিতে না পারায় পল্লবী থানার পুলিশ তাঁর স্বামীর নামে হেরোইনের মামলা দিয়েছে। পল্লবী থানা এমন আরও অনেকের নামেই হেরোইনের মামলা দিয়ে হয়রানি করে টাকা আদায় করেছে।
নাসিমা বেগম বলেন, ‘মায়ের সামনে ছেলেরে নির্যাতন করলে কি সহ্য করা যায়? আমার ছেলেরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হইছে।’ তিনি জানান, তাঁর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে হাবিব সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র উপার্জনক্ষম। হাবিবের দেড় ও সাড়ে ৬ বছরের দুজন পুত্রসন্তান আছে।
সাথী দাবি করেন, এই অভিযোগে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজিপির কার্যালয়, পুলিশ কমিশনার, মিরপুর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযোগ করলেও কোথায় থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হাবিব শেখের মা নাসিমা বেগম জানান, তাঁর সামনেই তাঁর ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ আচরণ করে পল্লবী থানার পুলিশ।