পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন বিষয়ক গোপনীয় তথ্য বিদেশে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একজন ইঞ্জিনিয়ার জোনাথন তোয়েবে (৪২) ও তার স্ত্রী ডায়ানা তোয়েবে (৪৬)। এ অভিযোগে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন বিষয়ক সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ জোনাথন তোয়েবে।এই প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গোপনীয় বিষয়গুলোর অন্যতম। কিন্তু এইসব প্রযুক্তি তিনি বিদেশি একটি সরকারের কাছে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি এ বিষয়ে ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন এমন একজনের কাছে, যাকে তিনি মনে করেছিলেন একজন বিদেশি কর্মকর্তা। আসলে ওই ‘বিদেশি কর্মকর্তা’ ছিলেন এফবিআইয়ের ছদ্মবেশী একজন গোয়েন্দা এজেন্ট। ব্যস, ধরা পড়ে যান জোনাথন। এ কারণে অক্টোবরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অনলাইন বিবিসি বলছে, জোনাথন যখন এই গভীর গোপনীয় তথ্য একটি গোপন স্থানে রেখেছিলেন, তা দেখাশোনা করতেন ডায়ানা। এক সময় একটি ডাটাকার্ড লুকিয়ে রেখেছিলেন তারা চীনাবাদাম মাখনের স্যান্ডউইচের ভিতর। এই কাজে সহযোগিতার জন্য সাবেক শিক্ষিকা ডায়ানাকে তিন বছরের জন্য জেলে যেতে হবে। অন্যদিকে তার স্বামী জোনাথন এ সপ্তাহের শুরুতেই দোষ স্বীকার করেছেন। এই অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন জেল।
জোনাথন তোয়েবে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের আনাপোলিসে বসবাস করতেন। এটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ একাডেমি। তার স্ত্রী ডায়ানা তোয়েবে একটি বেসরকারি স্কুলে ইতিহাস ও ইংরেজির শিক্ষিকা ছিলেন। আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি নৃতত্ত্ববিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রিধারী। মিলিটারি রিজার্ভের একজন সদস্য হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন জোনাথন তোয়েবে। ভার্জিনিয়ার আরলিংটনে নৌ-অপারেশন বিষয়ক প্রধানের অফিসে কাজ করেছেন তিনি।
তদন্তকারীদের তথ্যমতে, কয়েক বছর ধরে পারমাণবিক সাবমেরিন বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করেছেন জোনাথন তোয়েবে। কাজের ফাঁকে ডকুমেন্ট পাচার করেছেন। এক সময়ে কয়েক পৃষ্ঠা করে পাঠাতেন তিনি, যাতে সহজেই নিরাপত্তা বিষয়ক চেকপয়েন্ট অতিক্রম করতে পারেন।
তিনি তদন্তকারীদের কাছে লিখেছেন, ধীরে ধীরে আমি যেসব ফাইল বা জিনিস সংগ্রহ করেছি, তা একত্রিত করার ক্ষেত্রে চরমভাবে সতর্কতা অবলম্বন করেছি। এটা করেছি যাতে কেউই আমার পরিকল্পনা সম্পর্কে সন্দেহ করতে না পারে। তিনি যে ব্যক্তির সঙ্গে এই বিনিময় করেছেন তাকে তিনি বিদেশি সরকারের একজন হিসেবে মনে করেছিলেন।
প্রসিকিউটররা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন যে তোয়েবে দম্পতি ফ্লাইট রিস্কে ছিলেন। কারণ, তারা সহসা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বার্তা বিনিময় হয়েছে। ডায়ানা তোয়েবের আইনজীবীরা পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। তারা বলেছেন, তখনকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি পছন্দ করতেন না। তাই এমন ম্যাসেজ লিখেছেন। বিদেশি কোনো দেশের কাছে গোপন তথ্য বিক্রি করে দেয়ার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু জোনাথন তোয়েবে যে এফবিআইয়ের ফাঁদে পড়েছেন সে সম্পর্কে তিনি ছিলেন অসচেতন। তার সঙ্গে একটি নোটে জনাথন তাদের বন্ধুত্ব এবং ভবিষ্যত নিয়ে লিখেছেন। তাতে বলেছেন, একদিন, যখন বিষয়টি নিরাপদ হবে, সম্ভবত এই দুই পুরনো বন্ধু একটি ক্যাফেতে একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাত করবে।
এক বোতল ওয়াইন শেয়ার করবে। তারা যে তথ্য বিনিময় করেছেন সেই কাহিনী নিয়ে হাসিতে মেতে উঠবেন।এমন মামলায় স্বীকারোক্তি আদায় একটি অস্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তারা স্বীকার করেছেন। ফেডারেল তদন্তকারীরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছেন।