অপরাধআওয়ামী লীগনাটোরবাংলাদেশরাজনীতি

জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আগের দিন উত্তপ্ত নাটোর

জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আগের দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নাটোর। দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন পদপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীরা। এতে অন্তত ২৮ জন আহত হয়েছেন।সবচেয়ে বড় সংঘর্ষটি হয়েছে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাটোর সার্কিট হাউস এলাকায়।

জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সন্ধ্যার সংঘর্ষটি হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ওই সংঘর্ষে ২২ জন আহত হয়েছেন। এর আগে বেলা একটার দিকে সম্মেলনকে ঘিরে অপর এক সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়েছেন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নাটোর সদর আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলামের সমর্থক নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান, সাংসদ শফিকুলের ভাগনে ও কাউন্সিলর নাফিউল ইসলাম এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলামকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালসহ কেন্দ্রীয় নেতারা শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় সার্কিট হাউসে পৌঁছান। এ সময় শফিকুল ও শরিফুলের কর্মী–সমর্থকেরা প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল শুরু করেন। এ সময় ফুল দিয়ে কে আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা জানাবেন, তা নিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ সদস্যরা তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে প্ল্যাকার্ডের লাঠি নিয়ে দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয়।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল। উপস্থিত সবাইকে স্লোগান বন্ধ করে সার্কিট হাউস ত্যাগ করার নির্দেশ দেন তিনি। অন্যথায় পুলিশ অভিযান শুরু করবে বলেও হুমকি দেন।এস এম কামাল বলেন, ‘চিৎকার দিয়ে লাভ নেই। বিশৃঙ্খলা করলে উভয়কে সাসপেন্ড করা হবে।

শেখ হাসিনা এখনো প্রধানমন্ত্রী। তোমরা বিশৃঙ্খলা বন্ধ না করলে তিনি পুলিশকে দিয়ে তোমাদের উঠায়ে নিতে বলবেন। তোমরা সোজা বাড়ি চলে যাও।’ এ সময় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, সাংসদ শফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বেলা একটার দিকে সদর উপজেলার হরিশপুর ইউনিয়নের পিরজিপাড়া মাদ্রাসা এলাকায় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপকমিটির সদস্য এমরান সোনারের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত ছয়জন আহত হন।

আহত ব্যক্তিরা হলেন আফতাব হোসেন (৩১), জিয়ারুল ইসলাম (২০), আহম্মদ হোসেন (৭০), সুলতান মিয়া (৩৫), আসাদুল ইসলাম (২৫) ও রেজিয়া বেগম (৫০)। তাঁরা সবাই গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এমরান নাটোর জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা সার্কিট হাউসে প্রবেশ করার সময় সাংবাদিকদের বলেন, কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে তাঁকে প্রতিহত করা হবে। যেকোনো প্রকারে শান্তিপূর্ণভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে।সার্কিট হাউসের ঘটনার পরপরই সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এবার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবদুল মালেক শেখকে জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাশিরুর রহমান খান নিজের পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হন। এ সময় মালেক শেখ এগিয়ে গিয়ে তাঁকে গুলি করতে বলেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মালেক শেখ গুলি করতে বললে যুবলীগ নেতা তাঁকে গুলি না করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে ঘটনাস্থল ছেড়ে যান।

মালেক শেখ বলেন, ‘ওই সময় বাশিরুর রহমান সার্কিট হাউসের ঘটনায় আহত কয়েকজনকে গাড়িতে নিয়ে সদর হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখামাত্র তিনি গাড়ি থেকে নেমে পিস্তল বের করেন এবং আমাকে গুলি করতে উদ্যত হন। এ সময় আশপাশের লোকজন আগায়ে আসে। আমি নির্ভয়ে এগিয়ে গিয়ে গুলি করতে বলি। কিন্তু তিনি গালিগালাজ করে চলে যান।’ তবে বাশিরুর রহমান ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এমরানের অভিযোগ, হরিশপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন এ হামলা করেছেন। হরিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওসমান গণি ভূঁইয়ার ছেলে শফিকুল নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে চান।

Back to top button