অপরাধএক্সক্লুসিভকুমিল্লানেত্রকোনাবাংলাদেশরাজধানী

অপহরণের ৮ মাস পর মায়ের কোলে ফিরল শিশুটি

উদ্ধারের পর চার বছরের শিশুকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আনা হলে তার মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শিশুটি তার মাকে চিনতে পারছিল না। মা কোলে নিতে চাইলেও শিশুটি তাঁর কাছে যেতে চাইছিল না।

তখন মা ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় শুধু বলছিলেন, ‘আইয়ো বাজান, আইয়ো। একটা বছর ধইর‌্যা তোমারে আমি দেহি না। আমার চানগো, আইয়ো।’ ছেলের মাথায় পুরোনো আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘রাগ অইয়্যা এই বাড়িডা আমি মারছিলাম। দাগডা রইছে অনও।’

এই শিশু অপহরণের ঘটনায় গত শুক্রবার কুমিল্লা থেকে ইসমাইল হোসেন নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিনই নেত্রকোনার পূর্বধলা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় ডিবি।

রাজধানীর দক্ষিণখানের জামতলা এলাকা থেকে ৮ মাস আগে যখন শিশুটিকে অপহরণ করা হয়, তখন তার বয়স ছিল ৩ বছর ৪ মাস। এখন তার বয়স ৪ বছর। ৮ মাস পর শিশুটি তার মাকে ভুলতে বসেছে। এই সময়ে যে নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটিকে লালন-পালন করেছেন, তাঁদেরই মা-বাবা বলছে শিশুটি।

ডিবি জানায়, শিশুটির মা অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করেন ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি ওই নারীর প্রতিবেশী ছিলেন। শিশুটিকে অপহরণের পর থেকে তিনিও পলাতক ছিলেন। শিশুটিকে দুই হাজার টাকায় এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করেছিলেন ইসমাইল।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন বলেন, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে ওই নারীকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছিলেন প্রতিবেশী ইসমাইল হোসেন। তিনি পেশায় একজন নির্মাণশ্রমিক। মা প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তিনি শিশুটিকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেন। অপহরণের পর তিনিও আত্মগোপনে চলে যান।

ওই নারীর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দায়। ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায় মায়ের সঙ্গে থাকেন তিনি। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করেন। ছয় বছর আগে ময়মনসিংহের তারাকান্দার মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সন্তান জন্মের তিন মাস পর তাঁকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান মাজহারুল।

প্রযুক্তিগত তদন্তে অবস্থান শনাক্ত করে কুমিল্লা থেকে ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে ইসমাইল জিজ্ঞাসাবাদে জানান, শিশুটিকে নিজের সন্তান পরিচয়ে পূর্বধলার এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। সেখানে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

ডিবি কর্মকর্তারা জানান, শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই ইসমাইলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ থেকে শিশুটির মায়ের সন্দেহ হয়, ইসমাইলই তাঁর ছেলেকে নিয়ে গেছেন। ছেলের খোঁজে তিনি বিমানবন্দর এবং আশপাশের এলাকার রাস্তায় দিনের পর দিন খুঁজে ফিরেছেন। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে আকুতি জানিয়েছেন।

কিন্তু কীভাবে সন্তানকে পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়েও তাঁর ধারণা নেই। রাস্তায় বসে কান্নার সময় এক ব্যক্তি ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনারের মুঠোফোন নম্বর দেন তাঁকে।

সেই নম্বরে যোগাযোগের পর ইসমাইলের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করতে বলেন তিনি।ইসমাইলের এক বন্ধুর কাছ থেকে মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন ওই মা। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে তাঁকে ইসমাইল জানান, শিশুটিকে তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন।

অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবির ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান বলেন, অপহরণকারী ইসমাইল হোসেন বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি কুমিল্লায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে পাইলিংয়ের কাজ করছিলেন।

Back to top button