গত মঙ্গলবার সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে হেনস্তার শিকার হন মুসকান। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমগুলোয় ভাইরাল হয়েছে। ওই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, গেরুয়া উত্তরীয় পরা একদল কিশোর চিৎকার করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে মুসকানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
মুসকান কিশোরদের উদ্দেশে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়ে কলেজ ভবনের দিকে যাচ্ছেন। একপর্যায়ে কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও কর্মচারীরা সেখান থেকে মুসকানকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যান। মুসকান প্রথমে হেনস্তার শিকার হলেও উল্টো তাঁর বিরুদ্ধেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর উসকানির অভিযোগ।
হিজাব ও বোরকা পরার কারণে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের একটি কলেজের সামনে গেরুয়া উত্তরীয় পরা একদল কিশোরের কাছে হেনস্তার শিকার সাহসী মুসলিম ছাত্রী মুসকানের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী বি সি নগেশ। খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ নিয়ে ভারতে সম্প্রতি শুরু হওয়া বিতর্ক ও বিক্ষোভের মধ্যে গত মঙ্গলবার কর্ণাটকের মান্ডিয়া জেলার এক কলেজে এ ঘটনা ঘটে।এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী বি সি নগেশ বলেন, ‘মেয়েটিকে তো তারা (সমবেত কিশোর দল) ঘেরাও করতে চায়নি। কিন্তু যখন সে (মুসকান) আল্লাহু আকবর বলে চিৎকার শুরু করছিল, তখন তার পাশে একজন শিক্ষার্থীও ছিল না।
কলেজ প্রাঙ্গণে কেন সে (মুসকান) আল্লাহু আকবর বলে উসকানি দিল। কলেজ প্রাঙ্গণে “আল্লাহু আকবর” বা “জয় শ্রীরাম”কে উৎসাহিত করা হবে না। কেউ আইন নিজের হাতে নিতে পারে না। কোনো দুর্বৃত্তকে ছাড় দেবে না সরকার।’
হিজাব পরার জন্য শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, গত মাসে কর্ণাটকের উদুপি জেলায় সরকারি গার্লস পিইউ কলেজের ছয় শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ করার পর মুসলিম ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ শুরু করেন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই রাজ্যটিতে হিজাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
এ নিয়ে ক্রমেই রাজ্যের উদুপি, মান্ডিয়া ও শিভামোগার মতো শহরের কলেজগুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্কুল ও কলেজে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে মুসলিম ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করলে গেরুয়া উত্তরীয় পরে হিন্দুত্ববাদী স্লোগান দিয়ে অনেকে তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে উত্তেজনা বাড়ে।
এ প্রসঙ্গে মুসকান বলেছেন, ‘আমি যখন কলেজে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলাম, তখনই তারা (সমবেত কিশোর দল) আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। কারণ, আমি বোরকা পরেছিলাম। তারা জয় শ্রীরাম বলে চিৎকার শুরু করে। আমিও আল্লাহু আকবর বলে চিৎকার করি। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকেরা আমাকে সাহায্য ও রক্ষা করেছে।’মুসকান বলেন, তাঁর ধারণা, গেরুয়া উত্তরীয় পরে উত্ত্যক্তকারী কিশোরদের মাত্র ১০ শতাংশ ছিল তাঁর ওই কলেজের শিক্ষার্থী এবং বাকি সবাই ছিল বহিরাগত।
গতকাল বুধবার রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে সব ধরনের বিক্ষোভ ও সমাবেশ দুই সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।হিজাব নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে উদুপির একটি সরকারি কলেজের পাঁচ নারী শিক্ষার্থী কর্ণাটক হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেন। মঙ্গলবার পিটিশনের প্রথম শুনানি ছিল। আদালত বিষয়টি সুরাহার জন্য গতকাল আদালতের উচ্চ বেঞ্চে পাঠান। গতকাল হাইকোর্ট সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
হিজাব নিয়ে বিতর্ক কর্ণাটকের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার জানিয়েছে, রাজ্যটিতে হিজাব নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের কোনো ভাবনা নেই রাজ্য সরকারের। তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।
হিজাব-বিতর্কের জেরে কর্ণাটকের সব স্কুল-কলেজ তিন দিন বন্ধ ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই স্বয়ং। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তি ও সম্প্রীতির স্বার্থে’ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগেও তিনি সবাইকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান।