রূপচর্চা

সঠিক নিয়মে মুখ ধোয়া

সকালে পানির ঝাপটা মুখে পড়লেই, ঘুম ঘুম ভাব দৌড়ে পালায়। আমরা অনেকটাই প্রস্তুত হয়ে যাই সারা দিনের জন্য। মুখের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া, তেলতেলে হয়ে যাওয়া, ব্রণের আবির্ভাব, বলিরেখা, বয়সের ছাপ—ঠিকমতো মুখ ধুলে এসব সমস্যাকে শত হাত দূরে রাখা যায়। সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য মুখ ধোয়া খুবই জরুরি। জেনে নেওয়া যাক, কখন, কীভাবে আর কতবার ধোব। 

আমরা হাত দিয়ে মুখ ধুই। তাই মুখ ধোয়ার আগে সেই হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। কেননা, সারা দিনে আমরা মুঠোফোন, ল্যাপটপ, টাকা, কি-বোর্ড, লিফটের বোতামসহ নানা জায়গায় হাত রাখি। যেগুলো জীবাণুর আখড়া। সেখান থেকে মুখের ত্বকের মতো সংবেদনশীল জায়গায় সহজেই হতে পারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।

দ্বিতীয়ত, কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া ভালো। পানি বেশি গরম হলে আবার সমস্যা। এতে ত্বক প্রাথমিকভাবে বেশি শুষ্ক হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে ত্বক বেশি তৈলাক্ত হয়ে যেতে পারে। তৃতীয়ত, মুখে মেকআপ ব্যবহার করলে আগে সেটা মেকআপ ক্লিনজার, গ্লিসারিন, পেট্রোলিয়াম জেলি বা ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ভালোভাবে তুলে ফেলতে হবে। তারপর ধুতে হবে। মুখে সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। কেননা, বেশির ভাগ সাবানের ক্ষার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয়। ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক এবং আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।

ত্বকের সঙ্গে মানানসই ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার ব্যবহার করা যেতে পারে। সপ্তাহে দুবার স্ক্রাবার ব্যবহার করে ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করুন। এতে ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ বের হয়ে আসবে। ত্বকের রক্ত চলাচলও ভালো থাকবে।ত্বকের সঙ্গে মানানসই ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখুন, মুখের কোথাও যেন ফেনা জমে না থাকে। মুখ ধোয়া হয়ে গেলে নরম পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আলতো করে মুখে চেপে ধরে মুখ মুছতে হবে।

নতুন কাপড় ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, এটির তন্তু যেন ত্বকে আঁচড় না ফেলে। মুখ ধোয়ার পর তুলায় টোনার লাগিয়ে মুখে বুলিয়ে নিতে পারেন। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। রাতের বেলায় বাইরে থেকে ঘরে ফিরে ঘরে বানানো ফেসপ্যাক লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে পারেন।

তখন আর ফেসওয়াশ বা অন্য কিছু ব্যবহারের দরকার নেই। রাতে ময়েশ্চারাইজার বা জেল লাগিয়ে রাখলে সেটি সারা রাত ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। ফলে ঘুম থেকে উঠে আপনি যখন মুখ ধুতে যাবেন, তখনো ত্বক থাকবে কোমল।

আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সাধারণভাবে তিন থেকে পাঁচবার মুখ ধোয়া যায়। শীতপ্রধান দেশে এতবার মুখ না ধুলেও চলে। তবে যেকোনো ত্বকে সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে-দুই বেলা মুখ ধোয়া জরুরি। এ ছাড়া ভারী মেকআপ নিলে, ঘেমে গেলে, শরীরচর্চা করার পর, বাইরে ধুলাবালু থেকে ঘরে ফিরে, কোনো অনুষ্ঠান থেকে ফিরে, দিনের রান্নাবান্না শেষ করে ত্বক পরিষ্কার করা উচিত। এ ছাড়া অফিসে থাকলে সারা দিনে দুবার মুখ ধোয়া যেতেই পারে।

মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে জরুরি আটটি পরামর্শ দিয়েছেন পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান।

 ত্বক যদি অতিরিক্ত শুষ্ক হয়, তাহলে ফেসওয়াশের চেয়ে নমনীয় কোনো পণ্য ব্যবহার করতে পারেন, যেমন ক্লিনজার, মাইসেলার ক্লিনজিং ওয়াটার, ফেস অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।

 যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাঁরা রাতে ঘুমানোর সময় সাধারণত একাধিক ক্রিম ব্যবহার করেন। ফলে সেখানে সারা রাত ধরে ধুলা-ময়লা আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কেবল পানি দিয়ে হলেও ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। নয়তো ব্রণের সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 যাঁদের তৈলাক্ত মুখ, তাঁরা পানি আছে, এমন ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুতে পারেন।

 ফেসওয়াশের ভেতর স্ক্রাবার না থাকাই ভালো। কেননা, প্রতিদিন সকালে যে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া হয়, তাতে যদি স্ক্রাবার থাকে, সেটা ত্বকের ক্ষতি করবে।

 আলাদা স্ক্রাবার বা ব্রাশ দিয়ে সপ্তাহে দুবার, শুষ্ক ত্বক হলে সপ্তাহে একবার মুখ ধোবেন।

 তেলের পরিমাণ বেশি আছে, এমন কিছু দিয়ে মেকআপ তোলা ভালো। তবে তৈলাক্ত ত্বকে মেকআপ তোলার পর অবশ্যই ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। তাতে তেলতেলে ভাব চলে যাবে। বাজারে যেসব মেকআপ ক্লিনজার পাওয়া যায়, সেখানে সামান্য পরিমাণে হলেও রাসায়নিক পদার্থ থাকে। ত্বকের ওপর থেকে সেটা সরাতে মেকআপ তোলার পর মুখ ধুয়ে ফেলা জরুরি।

 ফেস মাস্ক ব্যবহারের পর মুখ ধোয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা, এতে কিছু সিরাম থাকে, যেটা ত্বকের জন্য ভালো।

 মুখ মোছার জন্য ওয়ান টাইম টিস্যু ব্যবহার না করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য ফেস পাফ ব্যবহার করা যেতে পারে। সেটা পরিবেশের জন্য ভালো। এ রকম একটা ফেস পাফ পরিষ্কার করে এক মাস ব্যবহার করা যায়।

Back to top button