কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার নগ্ন ভিডিও চ্যাট ক্লিপ ফাঁস
নগ্ন ভিডিও চ্যাট ক্লিপ ফাঁস হওয়ার অভিযোগে ভারতের কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন থেকে এক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করার পর সেই ক্লিপটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।এই ভিডিও চ্যাট আসলেই এই কর্মকর্তার কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ চ্যাটে তার চেহারা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই কর্মকর্তা মূলত প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। এ কারণে ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে তার নগ্ন ভিডিও চ্যাট প্রকাশ হওয়ার পর তাকে ঢাকায় ফেরত এনে পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় এক নারী কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাই কমিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মেসেঞ্জারে এই নগ্ন ভিডিও চ্যাটের ক্লিপ পাঠিয়ে দেন। একই সঙ্গে এ নিয়ে ওই কর্মকর্তার প্রোফাইল ছবি দিয়ে মুখরোচক সংবাদ পরিবেশন করে পশ্চিমবঙ্গের কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
আর তার ভিত্তিতেই ‘নৈতিক স্খলন’ সন্দেহে তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে পুরো ঘটনা বিশ্লেষণে এই কর্মকর্তা ‘হানি ট্র্যাপের’ ’ শিকার হয়েছেন, এমন সন্দেহই জোরালো হচ্ছে।
হানি ট্র্যাপ নতুন কিছু নয়। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলার সময়ে জার্মানদের পক্ষ নিয়ে ফরাসি রাজনীতিবিদ ও সমর নায়কদের ‘হানি ট্র্যাপের’ ’ ফাঁদে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল ডাচ নৃত্যশিল্পী মাতা হারির বিরুদ্ধে। প্যারিসে তার বিরুদ্ধে বিচার চলার সময় একজন আইনজীবী মাতা হারির কার্যক্রমকে ‘হানি ট্র্যাপ’ আখ্যায়িত করেন। সেই থেকেই ‘হানি ট্র্যাপ’ শব্দটি বিস্তৃত হতে শুরু করে।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে একজন বড় ব্যবসায়ীকে ফাঁসিয়ে দেন এক নারী। তার স্বামীই এই ‘হানি ট্র্যাপিং’ পরিকল্পনা করে। ঘটনাটি সে সময় ভারত জুড়ে হৈচৈ ফেলে। বাংলাদেশেও ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারানোর ঘটনার অনেক খবরই সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের ওই কর্মকর্তা আসলে মেসেঞ্জারে ভিডিও চ্যাট ক্লিপ পাঠানো ওই ভারতীয় নারীর কাছে ‘হানি ট্র্যাপের’ ’ শিকার হয়েছেন।
ভিডিও ক্লিপ থেকে ধারণা করা যায়, ওই কর্মকর্তা সম্ভবত নিছক মজা করার জন্যই কোন অ্যাডাল্ট সাইটে ওই নারীর সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করেছিলেন। কিন্তু কোনো কারণে দাবি পূরণ না করায় কিংবা সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় তাকে ‘হানি ট্র্যাপের’ ’ ফাঁদে ফেলেছে তার চ্যাট পার্টনার।
সূত্র জানায়, এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করে চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। তবে তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ নেই। অর্থাৎ প্রচলিত সংজ্ঞায় তিনি কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হননি। শুধুমাত্র নৈতিক স্খলনজনিত বিষয়ে সন্দেহের কারণে তাকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। কারণ ভিডিওতে তার চেহারাও স্পষ্ট নয়। ফলে যথাযথ তদন্ত ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রাপ্ত ভিডিও চ্যাটের ক্লিপ থেকে নৈতিক স্খলনজনিত বিষয়ে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার কারণে তাকে এরই মধ্যে কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ২৬ জানুয়ারি তাকে দেশে ফেরানো হয়। ওই দিনই তিনি সড়ক পথে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ওই কর্মকর্তা ঢাকায় ফিরে যান।