শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনশনকারী শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। মঙ্গলবার রাত নয়টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামেন প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান ১৫০ ঘণ্টা ধরে অনশনে থাকা তিন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন, জাহেদুল ইসলাম ও সাবরিনা মমতা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে প্রাক্তন পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারের বিষয়ে বলা হয়, দেশের কোনো আইনে অনুজদের কর্মসূচিতে ‘ডোনেশন’ দেওয়া অপরাধ কিংবা বেআইনি, সেটি তাঁদের জানা নেই। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে নিন্দা জানান তাঁরা। এ সময় অবিলম্বে নিঃর্শত মুক্তির দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া ওপরের নির্দেশে হলের ডাইনিং বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
অনশনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ফরিদ উদ্দিন উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর তালেবানি কালচারে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করার পর বিভিন্ন তালেবানি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কে আলপনা আঁকা নিষিদ্ধ করেছিলেন। তবে কেন সেটি করা হয়েছিল, সেটি শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেননি। পরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে সড়কে আলপনা আঁকার দাবি আদায় করেছিলেন।
সন্ধ্যা সাতটার পর শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের না হওয়ার কড়াকড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর বের হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হতো। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার রাত আটটার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে মুক্তচিন্তার জায়গা, সেখানে শিক্ষার্থীদের ১৮-১৯ দিন ধরে গ্রন্থাগার বন্ধের সময় বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অনশনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, অনশনের সপ্তম দিনে এসে চিকিৎসা সহায়তা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি তাঁরা কোনোভাবে আশা করেননি। যে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপদ মনে করেন না, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এ জন্য তাঁর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অনশনকারী ২৮ শিক্ষার্থীর শারীরিক দিক বিবেচনা করে অনশন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।