অভাবের তাড়নায় ১৮ দিনের কন্যাশিশুকে বিক্রি
নিজের জমিজমা নেই, তাই থাকেন অন্যের ঘরে। টুকটাক ঘটকালি আর এর-ওর কাছে চেয়েচিন্তে যা টাকা পান, তা দিয়েই কষ্টেসৃষ্টে চলে স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে সংসার। তাঁর ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। কিন্তু তার মুখে খাবার তুলে দেবেন কীভাবে? অভাবের তাড়নায় ১৮ দিনের কন্যাশিশুকে বিক্রি করে দেন শহুরে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে।
মেয়েটাও ভালো থাকবে, বেশ কিছু নগদ টাকাও পাওয়া যাবে, এই ছিল আশা। তবে যে পরিমাণ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তা তিনি পাননি। এক প্রতারক চক্র তাঁদের সন্তান বিক্রির সিংহভাগ টাকা নিয়ে যায়। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবির মোহাম্মাদ হোসেন বলেন, ‘শিশুটিকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে শিশুটিকে বিক্রির কথা আমি শুনিনি। দত্তক নেওয়া পরিবার বলেছে, তাঁদের কাছে দত্তক দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে শিশুটি মা–বাবার কাছে রয়েছে। আগামীকাল রোববার ওই কন্যাসন্তানসহ তাঁর মা–বাবাকে আদালতে তোলা হবে।’ যে দম্পতি ওই মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন, তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে ওসি তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
ঘটনাটি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার দুর্গাকাঠি গ্রামের। দরিদ্র ওই বাবার নাম পরিমল ব্যাপারী (৫৫)। গত বৃহস্পতিবার রাতে নেছারাবাদ থানা–পুলিশের একটি দল ওই দম্পতিকে খুঁজে বের করে ঢাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এরপর গতকাল শুক্রবার শিশুটিকে তাঁর মা–বাবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
নেছারাবাদ উপজেলার সমুদকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিজন একজন প্রতারক প্রকৃতির মানুষ। শুনেছি সে রনজিৎকে সঙ্গে নিয়ে পরিমলকে ফুসলিয়ে তাঁর কন্যাশিশুকে ঢাকার এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।’
পরিমল ব্যাপারী বলেন, ‘আমার কোনো জায়গাজমি নেই। অন্যের ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করি। ঘটক হিসেবে সামান্য কিছু আয় হয়। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়েই সংসার চলে। কিছুদিন আগে আমার স্ত্রী একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কদিন পর উপজেলার দুর্গাকাঠি গ্রামের বিজন হালদার ও রনজিত কুমার আমার কাছে আসেন। তাঁরা বলেন, মেয়েটিকে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দিলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেবেন। মেয়েটিও সেখানে ভালো থাকবে। অভাবের কারণে আমি শিশুটিকে দত্তক দিতে রাজি হই।’
পরিমলের স্ত্রী কাজল ব্যাপারী বলেন, ‘ঢাকা থেকে প্রাইভেট গাড়িতে করে একটি বড়লোক পরিবার আসেন। তাঁরা বিজনের কাছে টাকা দেন। এরপর আমার বাচ্চাটি নিয়ে যান। বিজন আমাদের শুধু ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। এরপর থেকে বিজনকে আমরা আর খুঁজে পাইনি।’ পাঁচ সন্তানের মা কাজল বলেন, ‘সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে আমি অসুস্থ ছিলাম। মেয়ের মুখখানিও দেখতে পারিনি।’