করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত সোমবার ১১টি বিধিনিষেধ জারি করে। গত বৃহস্পতিবার থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে।বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, দোকান, বাজার, বিপণিবিতানসহ জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে।
সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রতিদিনই রাজধানীতে অভিযান পরিচালনা করছেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরই অংশ হিসেবে বিকেলে মগবাজার মোড়েও অভিযান শুরু হয়। এ সময় আদালতের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা এহসান তানজিল রহমান। মাস্ক কেন নেই, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক মুখে পরা ছিল। টান লেগে খুলে পড়ে গেছে একটু আগে।’ তাঁকে ২০০ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তাইয়ান শাহরিয়ার রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ব্যক্তিগত কাজে ঘরের বাইরে বের হয়েছিলেন। কিন্তু মুখে মাস্ক ছিল না। মুখে মাস্ক নেই কেন—জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে তিনি বলেন, ‘ভুলে গেছি।’
দেশে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে লাগাম টানতে সরকারের জারি করা ১১ দফা বিধিনিষেধের একটি না মানার অপরাধ অকপটে স্বীকার করায় শাহরিয়ারকে ২০০ টাকা জরিমানা করেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ রোববার বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর মগবাজার মোড়ে জরিমানা করা হয় তাঁকে।
আদালত বেইলি রোডে যান। সেখানে মাস্ক না পরার অপরাধে পথচারী, রেস্তোরাঁমালিকদের জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি কেউ খাবার খেতে এলে টিকা সনদ যাচাই করতে রেস্তোরাঁমালিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়।শফিকুল ইসলাম ও হেলাল উদ্দিন—দুই বন্ধু মিলে বেইলি রোডের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বিকেল পাঁচটার দিকে। অথচ দুজনের কারও মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এইমাত্র একটি রেস্তোরাঁ থেকে খেয়ে বের হয়েছি। এ সময় তাঁরা পকেট থেকে বের করে মাস্ক দেখান। মাস্ক না পরার অপরাধে তাঁদের ২০০ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সরকারের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে রাজধানীর আরও কিছু স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযান চলাকালে দেখা গেছে, অনেক পথচারীর মুখেই মাস্ক নেই। মাস্ক কেন পরছেন না, জানতে চাওয়া হলে পকেট বা ব্যাগ থেকে মাস্ক বের করে দেখান। এ সময় অপরাধের মাত্রা ও কারণ বুঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পথচারীদের সতর্ক ও জরিমানা করেন।
মগবাজার মোড়ে ক্যাফে ডি মান্নাত হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। রেস্তোরাঁটিতে বসে খাবার খাওয়ার আগে টিকা সনদ দেখা হয় না। হোটেলে খাবার পরিবেশনকারী সবার মুখে মাস্ক নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত রেস্তোরাঁর ভেতর গিয়ে এমন চিত্র দেখতে পান। এ সময় রেস্তোরাঁয় চারজনকে খেতে দেখেন আদালত। রেস্তোরাঁয় ঢুকতে তাঁদের কাউকে টিকার সনদ দেখাতে হয়নি। কেন হয়নি, রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপকের কাছে জানতে চান ভ্রাম্যমাণ আদালত। জবাবে ব্যবস্থাপক সোলায়মান শাহ বলেন, টিকার সনদ দেখার সরকারি নির্দেশনার বিষয়টি জানতেন না তিনি। এ সময় রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ওয়ারী থেকে বেইলি রোডে কাজে এসেছেন সোনালী খাতুন। তবে তাঁর মুখে মাস্ক ছিল না। কেন মাস্ক নেই জানতে চাইলে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতকে নানা অজুহাত দেন। সোনালী বলেন, বাসা থেকে মাস্ক আনতে ভুলে গেছি। রিকশা দিয়ে আসার সময়ও কোনো মাস্ক বিক্রেতা চোখে পড়েনি, তাই কিনতে পারিনি। তাঁকেও জরিমানা করা হয়।
এরপর বেইলি রোডের নবাবীভোজ রেস্তোরাঁয় যান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় আদালত রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপককে জিজ্ঞেস করেন, টিকা সনদ যাচাই করা হচ্ছে কি না। উত্তরে ব্যবস্থাপক বলেন, দোকানে প্রবেশের আগে দারোয়ানকে দিয়ে টিকা সনদ যাচাই করা হচ্ছে। তবে দোকানের ভেতরে বসে থাকা চারজন গ্রাহককে জিজ্ঞেস করে ভ্রাম্যমাণ আদালত জানতে পারেন, টিকা সনদ যাচাই করা ছাড়াই তাঁরা প্রবেশ করেছেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেনকে সতর্ক করেন।
নবাবীভোজের পাশেই এ ওয়ান পেস্ট্রিতে তিনজন কর্মচারী কাজ করছিলেন। তাঁদের সবার মুখে মাস্ক দেখা গেল। কিন্তু মালিক ফজলে সোহরাবের মুখে মাস্ক নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি হেসে উঠে বলেন, ‘মাস্ক সব সময় পরা হয়, ভুলে গেছি।’
মাস্ক না পরার অপরাধে আজ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মগবাজার মোড় ও বেইলি রোড এলাকায় ১২ জনকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হয়। এ সময় অভিযানের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাস্ক পরা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা একেবারে নেই। বাইরে বের হলে সরকারি নির্দেশনা মানার বিষয়েও মানুষের আগ্রহ কম। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্দেশনা মানবে, সেটি নেই।’ইয়াসির আরাফাত বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। অভিযানের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষ জানতে পারলেন, মাস্ক না পরলে প্রশাসন আইন অনুযায়ী দণ্ড দেবে।