তৈমুর আলম খন্দকারের নির্বাচনী ‘শোডাউন’
আজ বেলা পৌনে ১২টার দিকে শহরের খাঁনপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে থেকে বড় মিছিল নিয়ে তৈমুর আলমের শো ডাউন শুরু হয়।নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা ঢাক-ঢোল নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। এ সময় তৈমুর আলম একটি ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে রাস্তার দুই পাশের উপস্থিত জনতাসহ বাসা-বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ানো লোকজনের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তিনি দুই হাত তুলে সবার কাছে দোয়া চান।
হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক নিয়ে আজ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী ‘শোডাউন’ করেছেন সিটি নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার।খাঁনপুরে পথসভা শেষে তৈমুর আলমের নেতৃত্বে শহরে বড় মিছিল বের হয়। পথসভায় তিনি বলেন, ‘জনমত আমাদের পক্ষে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেভাবে জনগণের সাড়া মিলছে, তাতে ১৮ বছরের ক্ষোভ নিরসনের লক্ষ্যে একটা পরিবর্তন অবশ্যই হবে।’
মিছিলটি খাঁনপুর থেকে শুরু হয়ে মেট্রো হল মোড়, চাষাড়া, বঙ্গবন্ধু রোড হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বেলা দেড়টায় মিছিলটি আবার মেট্রো হল মোড় গিয়ে শেষ হয়।মিছিলের কারণে সংশ্লিষ্ট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। রাস্তায় দুইবার তৈমুর আলমকে থামানোর চেষ্টা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নারায়ণগঞ্জে আসা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ করেন তৈমুর আলম। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে কিছু সম্মানিত মেহমান আসেন। ওঁনারা এসে নারায়ণগঞ্জে এমন কিছু কথা বলেন, যেটা নারায়ণগঞ্জের মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। একজন বলে গেছেন, তৈমুরকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। আরেকজন বলেছেন, ঘুঘু দেখেছ, তো ঘুঘুর ফাঁদ দেখনি। এখন আমরা ফাঁদ দেখা শুরু করেছি।’
কীভাবে?—এমন প্রশ্ন তুলে তৈমুর আলম বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে। এত দিন পুলিশ সুপার কোনো গ্রেপ্তার করেননি। যাঁরা রাজনীতিবিদ, তাঁদের মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে গ্রেপ্তার করছে। এ অবস্থার অবশ্যই নিরসন হবে। কারণ জনমত আমাদের পক্ষে।’তৈমুর আলম বলেন, ‘এই পুলিশি নির্যাতন, সরকারি নির্যাতন যতই বৃদ্ধি পাবে, ততই আমাদের পক্ষে জনসমর্থন বৃদ্ধি পাবে।’
পথসভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাংসদ এস এম আকরামও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, তৈমুর আলম একজন আইনজীবী। তিনি আইনের মানুষ। তিনি কোনো অপরাধীর পক্ষ নেবেন না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করবেন।
এস এম আকরাম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জবাসী পরিবর্তন চায়। ১৮ বছরে উন্নয়ন হয়েছে, নতুন মুখ এলে এর চেয়ে বেশি উন্নয়ন হবে। সিটি করপোরেশনের সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি বন্ধ হবে। পৌর প্রশাসনের দুরবস্থার দূর হবে। তৈমুর আলম শহরবাসীর সংকটকালে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবার সবাই মিলে আমরা পরিবর্তন আনব।’
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির সাবেক নেতা তৈমুর আলম বলেন, ‘এই নারায়ণগঞ্জ রাজনীতির সূতিকাগার। আপনি নারায়ণগঞ্জকে চেনেন, নারায়ণগঞ্জকে জানেন। আপনাকে সবিনয় অনুরোধ করব, নারায়ণগঞ্জের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনটা যাতে ঘটে।
নারায়ণগঞ্জের মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারে, কোনো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে যাতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিঘ্ন না ঘটে।’এমনটি করলে প্রধানমন্ত্রীর সুনাম বৃদ্ধি, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে বলে মন্তব্য করেন তৈমুর আলম।
পথসভায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব এ টি এম কামালও বক্তব্য দেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা যারা শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক, আমাদের ভেতরে তাঁর (খালেদা জিয়া) জন্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাঁর এ অবস্থার জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের আজকের এই লড়াই। আমাদের এই লড়াই আদর্শিক লড়াই, ঈমানি লড়াই।’
মিছিলটি বঙ্গবন্ধু সড়কের সাধাপৌলের গির্জার সামনে এলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত ফেরদৌস তৈমুরের গাড়ি থামান। এ সময় কয়েকজন পুলিশসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তৈমুরের কাছে কিছু বলতে দেখা যায়। নেতা-কর্মীরা এই দৃশ্য দেখে উত্তেজিত হয়ে জোরে জোরে স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষুব্ধ মিছিলকারীদের কেউ কেউ গাড়িতে আক্রমণে উদ্যত হলে অন্যরা এসে থামান। উত্তেজনাকর অবস্থায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িটি দ্রুত চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাতি প্রতীকের মিছিলটি মেট্রো হল মোড় পার হয়ে ডন চেম্বার এলাকায় এলে গাড়ি নিয়ে রাস্তার অপর পাশ দিয়ে যাওয়া একজন ম্যাজিস্ট্রেট তৈমুর গাড়ির থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় মিছিলে উত্তেজনা দেখা দেয়।