করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ, উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ বন্ধ রাখাসহ ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে দেশবাসীকে এসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।
দেশে করোনা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। এই অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। আগামী ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে এসব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে বলে সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১১ দফা বিধিবিধান দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ডিসেম্বরের শুরুতে দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এটি সারা বিশ্বে ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হলেও বাংলাদেশে এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে ডিসেম্বর থেকেই দেশে আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যা বেশি না হলেও শনাক্তের সংখ্যা নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এই অবস্থায় সরকার কারিগরি ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জারি করেছে এসব বিধিনিষেধ।
আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে বলা হয়, করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা–সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
বিধিনিষেধগুলো হলো বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। আর সব ধরনের যানবাহনের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে করোনার টিকা সনদ থাকতে হবে।
মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধঃদোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সকল জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।১২ বছরের বেশি বয়সী সকল শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।
স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং-এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সকল মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।
উন্মুক্ত স্থানে সর্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বাড়ছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে।
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দেওয়া করোনার নতুন ধরন এরই মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে এখন দিনে করোনা রোগী শনাক্ত দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে মাসখানেক আগে এই সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি ছিল। করোনার বিস্তার ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।