ঢাকা থেকে বরিশালগামী সুরভী- ৯ লঞ্চে আগুন লাগার আতঙ্কে ৯৯৯-এ ফোন করায় যাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে লঞ্চের কর্মচারীরা। রোববার সকাল পৌঁনে ১০টায় লঞ্চটি নিরাপদে বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছানোর পর যাত্রীদের ওপর হামলা করেন তারা। এ সময় হামলার ছবি ধারন করতে গেলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের দুটি ক্যামেরাও ভাংচুর করে কর্মচারীরা।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নদীবন্দরে দুই দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা এবং নৌ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে হামলার পরপরই অভিযুক্ত লঞ্চের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
শনিবার দিবাগত গভীর রাতে মেঘনা অতিক্রমকালে লঞ্চের ইঞ্জিনের পাইপ থেকে ধোঁয়া বের হলে যাত্রীদের মধ্যে আগুন আতংক দেখা দেয়। এ সময় যাত্রীরা ৯৯৯ এ কল দেয়ার পর নৌ পুলিশ, কোষ্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে চাঁদপুর বন্দরে নিরাপদ যাত্রাবিরতির পর লঞ্চটি রোববার সকাল পৌঁনে ১০টায় যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে পৌঁছে।
হামলায় আহত চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপারসন রুহুল আমিন বলেন, ‘আজ সকালে লঞ্চটি বরিশাল বন্দরে পৌঁছার পর যেসব যাত্রী রাতে সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে লাইভ দিয়েছিলেন, সেসব যাত্রীকে খুঁজে মারধর শুরু করেন লঞ্চের কর্মীরা। সেসব ধারণ করতে গেলে লঞ্চের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে স্টাফরা আমাকে এবং আমার সহকর্মী ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দেওয়ান মোহনের ওপর হামলা করা হয়। পরে উপস্থিত ব্যক্তিরা আমাদের উদ্ধার করেন।’
সুরভী- ৯ লঞ্চের মাষ্টার আবুল কালাম জানান, যাত্রী নিয়ে তারা শনিবার রাত ৯টায় ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশালে রওনা হন। রাত পৌঁনে ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় পৌঁছলে ইঞ্জিনের বাস্প নির্গমনের সাইলেন্সরর অ্যাডজাস্ট পয়েন্ট থেকে ধোয়া বেরুতে থাকে। যাত্রীরা তা দেখতে পেলে তাদের মধ্যে আগুন আতঙ্ক দেখা দেয়। নারী যাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করে। লঞ্চের মধ্যে হুলস্থূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে লঞ্চ তীরে ভেড়ানোর জন্য কর্মচারীদের কাছে আকুতি জানায় যাত্রীরা।
অবশ্য সুরভী নেভিগেশনের পরিচালক রেজিন-উল কবির গণমাধ্যমকে বলেছেন, লঞ্চে আগুন লাগেনি। সাইলেন্সার অ্যাডজাস্টরের কাপড় ভেজা থাকায় ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর সকালে নৌ বন্দরে পৌঁছার পর অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। ব্যবস্থাপক মিজানুর যাত্রী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মাষ্টার আবুল কালাম জানান, তারা নিশ্চিত ছিলেন ইঞ্জিনে আগুন লাগার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। তাই দুটি ইঞ্জিনের একটি বন্ধ করে অপরটি দিয়ে ধীরে সামনের দিকে এগুতে থাকেন। এ সময় আতঙ্কিত যাত্রীরা ৯৯৯- এ কল করেন এবং ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ছেড়ে দেন। পরে কোষ্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বাহিনী স্পিডবোট নিয়ে লঞ্চের দিকে এগিয়ে আসেন। তাদের নির্দেশে লঞ্চটি চাঁদপুরের মতলবপুর উপজেলার মোহনপুর ষ্টেশনে ভেড়ানো হয়। ইঞ্জিন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে তারা নিশ্চিত হন যে যানটি কোন ত্রুটি নেই। পরে রাত সাড়ে ৩টায় মোহনপুর থেকে ছেড়ে সাড়ে ৪টায় চাঁদপুর ষ্টেশনে ভেড়ানো হয় লঞ্চটি।
বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুরের বন্দর কর্মকর্তা মো. কায়সারুল ইসলাম বলেন, লঞ্চটির ইঞ্জিন রুম থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন যাত্রীরা। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে কোনো একজন যাত্রী ৯৯৯ নম্বরে কল করে সহযোগিতা চান। এরপর পুলিশ মোহনপুর এলাকায় সুরভী-৯ লঞ্চটি ঘাটে আটকে রাখা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বরিশালের উদ্দেশে লঞ্চটি যাত্রা করে।গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে একটি লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে এ পর্যন্ত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৩১ জন।