অপরাধনরসিংদী

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় হত্যা

১১ বছরের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে রুনা আক্তার ও আবুল কালাম মিয়া দম্পতির। তিন বছর আগে গ্রামের বিভিন্ন এনজিও থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরব যায় আবুল কালাম মিয়া।সেখানে গিয়ে পরিবারের খরচও দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ আসে রুনার ওপর। শ্বশুরবাড়ি থেকেও এই ঋণের টাকা তাকেই পরিশোধ করতে চাপ দেন আবুল কালাম। যদিও রুনার পরিবার ছিল অসচ্ছল। একপর্যায় রুনার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। এতে বাধ্য হয়ে নারী নির্যাতনের একটি মামলাও করেন রুনা।

নরসিংদীর রায়পুরায় ধানক্ষেত থেকে রুনা আক্তার নামে এক গৃহবধূর চোখ উপড়ানো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। স্বামীর অবর্তমানে দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি না হওয়ায় হত্যার শিকার হন রুনা। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো- খোরশেদ মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাক।

গতকাল সকালে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (এএসপি) মুক্তাধর জানান, গত ১৩ই ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরার চরমরজালের একটি ধানক্ষেত থেকে রুনা আক্তার নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ভুক্তভোগী রুনা আক্তারের স্বামী আবুল কালাম মিয়া সৌদি প্রবাসী। তাদের ৩টি সন্তান রয়েছে।

জানা যায় আবুল কালাম সম্প্রতি তালাক নামা পাঠায় রুনাকে। এতে রুনা তার তিন সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে পড়েন। বাধ্য হয়ে কাজ শুরু করেন গ্রামের সবজিক্ষেতে। গত ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরার চর মরজালের একটি ধানক্ষেত থেকে রুনা আক্তারের (২৮) চোখ উপড়ানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কে বা কারা এবং কি কারণে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তা নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর রুনার বাবা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা (নং-১২) দায়ের করেন।

সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (এএসপি) মুক্তাধর জানান, গত ১২ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রুনা বাবার বাড়ি থেকে মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ৮টার দিকে পরিবারের সদস্যরা তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নম্বর বন্ধ পান। ১৩ই ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় লোকজন গ্রামের ধানক্ষেতে রুনার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় পিতা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

ঘটনাক্রমে শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর সন্দেহ হলেও গুরুত্বের সঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। এতে পাওয়া যায় হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য। রুনার দূর-সম্পর্কে এক মামা আব্দুর রাজ্জাক তাকে নতুন করে বিয়ের প্রলোভন দেখায় খোরশেদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। এজন্য খোরশেদের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা নিয়েছিল মামা রাজ্জাক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিয়েতে রাজি না হওয়ায় রুনাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেন আব্দুর রাজ্জাক ও খোরশেদ মিয়া’।

 ১২ই ডিসেম্বর রুনা আক্তার বের হলে প্রথমে রাজ্জাক ও খোরশেদ আলমের সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় ৩ জনের মাঝে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে রুনা আক্তারের গলার ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার তদন্তে শনিবার বিকালে নেত্রকোনার কমলাকান্দা এলাকা থেকে সিআইডি দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Back to top button