গ্রামের মানচিত্র এঁকে ৩০ বছর পর মাকে খুঁজে পেলেন যুবক
তিন দশক আগের সেই স্মৃতি থেকে গ্রামের একটি মানচিত্র আঁকেন এবং চীনের জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপে পোস্ট করেন লি। আশা ছিল, কেউ এই মানচিত্র দেখে গ্রামটি চিনতে পারবে, আর তাহলে তিনিও ফিরতে পারবেন মাতৃভূমিতে। ভাগ্যগুণে ঠিকই তিনি মায়ের কাছে ফিরতে পেরেছেন।
লি তাঁর ওই ভিডিওতে বলেন, ‘আমি সেই শিশু যে তার বাড়ি খুঁজছে।’ গ্রামের নাম বা ঠিকানা কিছুই মনে করতে পারছিলেন না লি। সেই চার বছর বয়সের স্মৃতি থেকে মানচিত্রে গ্রামের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো আঁকেন। স্কুল, বাঁশবন এবং পুকুরসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য মানচিত্রে আঁকার চেষ্টা করেন লি।
ত্রিশ বছর আগে, লি জিংওয়েই-এর বয়স যখন চার বছর, তখন এক প্রতিবেশী তাঁকে অপহরণ করে। চীনের ইউনান প্রদেশে নিজ গ্রাম থেকে অপহৃত লিকে একটি শিশু পাচারকারী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।মাকে খুঁজে পাওয়ার পর চীনের একটি স্থানীয় গণমাধ্যমকে লি বলেন, ‘আমি জানতাম গাছ, পাথর, গরু এমনকি রাস্তার বাঁক এবং পানির প্রবাহ- এসব আমার মনে ছিল।’
মাকে খুঁজে পাওয়ার আগে দৌয়িন প্রোফাইলে লি লিখেছিলেন, ‘তেত্রিশ বছরের অপেক্ষা, অগণিত রাতের আকুলতা এবং অবশেষে স্মৃতি থেকে হাতে আঁকা একটি মানচিত্র, ১৩ দিন পর মুক্তির লগ্ন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ যারা আমাকে আমার পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে সাহায্য করেছেন।’
টিকটকের চীনা সংস্করণ দৌয়িন-এ ওই ভিডিও শেয়ার করেন লি। গত ২৪ ডিসেম্বর বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে এবং মানচিত্রটি ইউনানের একটি গ্রামের সঙ্গে মিলে যায়। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, বহু দিন আগে সেই গ্রামের এক মায়ের শিশুসন্তান নিখোঁজ হয়েছে।
ডিএনএ পরীক্ষার পর গত শনিবার মা-ছেলের মিলনে আবেগঘন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, লি মায়ের মুখ দেখার জন্য মাস্ক খুলছেন। এরপর দুজনেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্থানীয় পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লি বলেন, ‘আমার ফোন পেয়ে মা কেঁদেছিলেন। ভিডিও কলে তাঁকে একনজর দেখেই চিনতে পারি। আমার মা এবং আমার ঠোঁট ও দাঁত একই রকম।’
গুও গ্যাংতাঙ নামে এক ব্যক্তি ২৪ বছর ধরে তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান করছিলেন। ছেলের সন্ধানে মোটরসাইকেলে ৩ লাখ মাইলেরও বেশি ভ্রমণ করেছিলেন। অবশেষে ছেলেকে পেয়েছিলেন। এরপরই সেলিব্রিটি বনে যান গ্যাংতাঙ। এই ঘটনা লিকেও আশান্বিত করেছে।বর্তমানে দক্ষিণ চীনের গুয়াংদং প্রদেশে বসবাস করছেন লি। দত্তক পিতামাতা তাঁকে ভালোভাবেই লালন-পালন করেছেন বলে জানান লি। এমনকি ডিএনএ পরীক্ষার পরামর্শও তাঁরাই দিয়েছিলেন।
১৯৮৯ সালে অপহরণের শিকার হন লি। ১ হাজার ১০০ মাইলেরও বেশি দূরে লঙ্কাওতে একটি পরিবারের কাছে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সম্ভবত সেই পরিবারটি একটি ছেলে সন্তান আশা করছিল বলে লিকে তারা কিনে নেয়।লি বলেন, মিডিয়াতে এ রকম আলোচিত কিছু গল্প পড়ে ও দেখে তিনি তাঁর আসল বাবা-মার সন্ধান করতে অনুপ্রাণিত হন। গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এমন দুটি ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।