হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন
দেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাচ্ছেন আজ ৩০ ডিসেম্বর। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ও বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। গতকাল বুধবার তার নিয়োগের ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আজ বৃহস্পতিবার এ নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হবে। বঙ্গভবন ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বহুল আলোচিত পদত্যাগের পর ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ৪৭ মাস প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে আজ ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন তিনি। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের একমাত্র কর্তৃত্ব রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি যোগ্য যে কাউকেই এ পদে নিয়োগ দিতে পারেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ফাইলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির পর বঙ্গভবনে তার শপথ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি তাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তার নিয়োগ কার্যকর হবে। বর্তমানে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আপিল বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি। প্রথম জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী।
এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল দুপুরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতি যাকে যোগ্য বিবেচনা করবেন, তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব দেবেন। এটা রাষ্ট্রপতির সর্বময় ক্ষমতা। রাষ্ট্রপতি তার সুবিবেচনায় যাকে যোগ্য বিবেচনা করবেন এবং আইন ও সংবিধানের পরিধির মধ্যে তার যে ক্ষমতা সেটা ব্যবহার করবেন। আমি বিশ্বাস করি, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে যারা বিচারপতি আছেন তারা অত্যন্ত যোগ্য। আপিল বিভাগের যারা আছেন তারা প্রত্যেকেই হয়তো প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। রাষ্ট্রপতি সেই যোগ্যতা অনুসারে তার বিবেচনা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ১৯৭২ সালে তিনি খোকসা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এর পর সাতক্ষীরা আচার্য্য প্রফুল্ল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭৪ সালে তিনি ওই কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৭৬ সালে স্নাতক পাস করেন। এর পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৯৭৮ সালে এমএ করেন। তার পর তিনি ধানমন্ডি ল কলেজ থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮১ সালে তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে একজন আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। এর পর বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে তাকে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে বাদ দেন।
পরে আদালতের রায়ে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর পর ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি তাকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। সর্বশেষ গত বছরের ৩ মে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি।