অপরাধএক্সক্লুসিভজাতীয়বাংলাদেশরাজধানী

স্বাস্থ্যের নথি চুরির দুই মাস পেরোলেও মামলা হয়নি

গত ২৭ অক্টোবর কিছু নথি স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের ফাইল ক্যাবিনেটে রাখা হয়। পরদিন দেখা যায়, ফাইলগুলো নেই। পরদিন এই ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় জিডি করে মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাদিরা হায়দার জিডিটি করেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে নথি চুরির পর প্রায় দুই মাস চলে গেলেও কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ সূত্র বলছে, ঘটনার পর রাজধানীর শাহবাগ থানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল, তার তদন্তও থেমে গেছে। চুরির মতো ফৌজদারি অপরাধের ঘটনা ঘটলেও মামলা করতে রাজি নন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

নথি চুরির ঘটনায় মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. শাহ্ আলমকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ ঘটনায় চারজন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাঁরা হলেন ওই বিভাগের ক্রয় ও সংগ্রহ-২ শাখার সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা, জোসেফ সরদার, প্রশাসন-২-এর (গ্রহণ ও বিতরণ ইউনিট) অফিস সহায়ক বাদল চন্দ্র গোস্বামী ও প্রশাসন-৩ শাখার অফিস সহায়ক মিন্টু মিয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চায় না, তাই জিডির তদন্ত বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা করতেও রাজি নন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, চুরি হওয়া নথির বিকল্প নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই নথিগুলো আর উদ্ধার না করলেও চলবে।

থানা-পুলিশের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ১৭টি নথি চুরির ঘটনা ও জিডির ছায়া তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও চুরি হয়ে যাওয়া নথি উদ্ধারে কাজ শুরু করেন সিআইডির কর্মকর্তারা। কয়েক দফায় মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী, একজন ঠিকাদারসহ ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিআইডির কর্মকর্তারা।

সিআইডির সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছিলেন। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা না হওয়ায় তাঁদের ছেড়ে দিতে হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

নথি চুরির ঘটনার জিডির তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন গত ১১ নভেম্বর বলেন, তদন্তে বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।সিআইডির পাশাপাশি ওই জিডির তদন্ত করছে শাহবাগ থানার পুলিশ। থানার পুলিশ বলছে, জিডির তদন্ত অব্যাহত আছে। অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক অমল দে বলেন, চুরি হওয়া নথি উদ্ধার হয়নি। নেপথ্যের কারণ এখনো জানা যায়নি।

যে নথিগুলো খোয়া গেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের অধীন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিভাগের কেনাকাটা-সম্পর্কিত। জিডি সূত্র জানায়, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজের কেনাকাটাসংক্রান্ত একাধিক নথি, জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয়সংক্রান্ত নথি চুরি হয়েছে। এর বাইরে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক প্রকল্পের নথিও চুরি হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া ঘর থেকে নথিগুলো চুরি হয়। পাশের লাগোয়া ঘরটিতে বসেন ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২-এর সাঁট মুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদার ও আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো এই দুই কর্মীর ক্যাবিনেটে ছিল।

কর্মকর্তাদের ধারণা, কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একজন অন্যজনকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন। চুরির পর ধরা পড়ার ভয়ে নথিগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত না করে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

Back to top button