আলোচিত–সমালোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন হাজারী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী তাঁর এলাকার সাবেক সাংসদ জয়নাল হাজারীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
জয়নাল হাজারী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শোক জানিয়েছেন।হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জয়নাল হাজারী হৃদযন্ত্র, কিডনি ও ফুসফুস সংক্রমণে ভুগছিলেন। গত ১৫ ডিসেম্বর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। আজ বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
জয়নাল হাজারী দীর্ঘদিন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।জয়নাল হাজারী দীর্ঘদিন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৬–২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে জয়নাল হাজারী ফেনীতে ‘ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করেছিলেন। সে সময় ফেনীতে তাঁর নেতৃত্বে ‘স্টিয়ারিং কমিটি’, ‘ক্লাস কমিটি’ গঠনসহ নানা ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের পাশাপাশি নিজ দলের বিরোধীদের ওপরও নির্যাতন চালান জয়নাল হাজারী। সে সময় সাংবাদিকেরাও তাঁর নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি।
জয়নাল হাজারীর কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বছর ১৭ অক্টোবর রাতে ফেনী শহরের মাস্টার পাড়ায় জয়নাল হাজারীর বাসভবনে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয়। সে সময় তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান।
বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার জন্মভূমি ফেনীতে।নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত এ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অধ্যায়ের অবসান হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করা এই রাজনীতিকের রয়েছে নানা আখ্যান।
জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে যে সমস্ত সমালোচনা, তার কতটুকু প্রচার এবং কতটুকু অপপ্রচার তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম প্রশ্ন রয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়নাল হাজারীর বাড়িতে অভিযানের কী উদ্দেশ্য ছিল, সেটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বিরাট অমীমাংসিত প্রশ্ন।
ওই অভিযানের পর তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, দুর্বৃত্তরা সব পালিয়ে গেছে। অর্থাৎ সরাসরিই তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অবস্থান নিয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান দিয়েই আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাঠ থেকে প্রায় বের করে দেওয়া হয়েছিল।
আট বছর দেশের বাইরে থাকার পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরলে দেশে ফেরেন জয়নাল হাজারী। পলাতক থাকা অবস্থায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।পরে আবার জয়নাল হাজারীকে দলে ফিরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। ২০১৯ সালে তাঁকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীতে স্থান দেওয়া হয়।
তবে জয়নাল হাজারীর মতো নেতাদের দলের অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা, সেই ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। তাদের আকাঙ্ক্ষাকে শেখ হাসিনা সবসময় শ্রদ্ধা করেন। এ কারণেই আবার অসুস্থ জয়নাল হাজারীকে তিনি ডেকে আনেন গণভবনে। তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করেছেন।জয়নাল হাজারী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৫ সালের ২৪ আগষ্ট। ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ৭৬ বছর বয়সে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।