মেডিকেল শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর যৌন হয়রানির অভিযোগ

রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষকের বিরদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন এক ছাত্রী। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ২২ ডিসেম্বর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পাশাপাশি হলি ফ্যামিলির অধ্যক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্ত শুরু করেছে কলেজের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি।

ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পরীক্ষায় পাস না করিয়ে একই শিক্ষাবর্ষে অনেক বছর রাখার হুমকি দিয়ে ওই শিক্ষক তাঁকে মেসেঞ্জারে খারাপ প্রস্তাব দেন। প্রাইভেট পড়ার জন্য তাঁকে বাসায় যেতে বলেন। কিন্তু বাসায় যেতে তিনি রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষক তাঁকে খারাপ প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। এতে তাঁর পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস সমকালকে বলেন, জিডির তদন্তের অনুমতি নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলেই তদন্ত শুরু হবে।অভিযোগ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বলেন, ‘পরীক্ষায় ফেল করার কারণে তিনি এ অভিযোগ করে থাকতে পারেন। কলেজের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমাকে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।’

এর আগেও এই ছাত্রী একই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি-এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, মেয়েটি মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন, কিন্তু কারো নাম বলেননি তখন।হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দৌলতুজ্জামান বলেন, তিনি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিাযোগ পেয়েছেন। তার মেডিকেল কলেজে সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত পাঁচ সদস্যের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটির কাছে বিষয়টি তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

গত ২২ ডিসেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা জিডিতে শিক্ষার্থী উল্লেখ করেছেন, তিনি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। একই কলেজের সহকারী এক অধ্যাপক ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্নভাবে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। তাকে একাকি দেখাও করতে বলেন ওই শিক্ষক। এতে রাজি না হওয়ায় নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়। ম্যাসেঞ্জারে নানাভাবে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া হয়।

যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী তার ফেসবুক আইডিতে রোববার একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে লিখেছেন-‘ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকদের অবশ্যই ভয় পাবে, কিন্তু সেটা শ্রদ্ধার চোখে। কোনো অসাধু শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাব না মানায় পরীক্ষায় বার বার ফেল হওয়ার ভয়ে নয়।’

ওই শিক্ষার্থী রোববার সন্ধ্যায় বাংলা ম্যাগাজিনকে জানান, তিনি পড়ালেখায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলেন। এক শিক্ষার্থীর কথা মতো তিনি ওই শিক্ষকের কাছে কলেজেই প্রাইভেট পড়া শুরু করেন ২০২০ সালের শুরুর দিকে। দুই দফায় তার কাছে ২০ হাজার টাকা নেন ওই শিক্ষক। গত বছরের মার্চে দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেপ্টেম্বরের শুরুতে অনলাইনে আইটেম পরীক্ষার জন্য তার সঙ্গে যোগযোগ হয় ওই শিক্ষকের। এরপর থেকে তাকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা লিখতেন ওই শিক্ষক।

ওই ছাত্রী জানান, নিজের এবং পরিবারের মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে তিনি এতদিন বিষয়টি কাউকে জানাননি। কিন্তু যখন শিক্ষকের কারণে পড়ালেখা হুমকির মুখে তখন থানায় জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এর আগেও তিনি মৌখিকভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান।

ঐ ছাত্রী ফেসবুকে আরও লিখেছেন, ‘মেডিকেল কলেজে এত দিন আছি। এই প্রথম এ রকম অপ্রীতিকর প্রস্তাবের সম্মুখীন হলাম। যদিও এখন অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করছে যে তারাও এই একই শিক্ষকের দ্বারা বিভিন্নভাবে হেনস্থা হয়েছে। এখন আমি যাতে আর সামনে না আগাই সেজন্য বিভিন্ন দিক দিয়ে নতুন নতুন হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’বিভিন্ন সময় ওই শিক্ষক তাকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে যেসব অশ্লীল কথাবার্তা লিখে পাঠিয়েছেন তার কয়েকটি স্ক্রিনশটও তুলে ধরা হয়েছে ফেসবুক পোস্টে।

Exit mobile version