‘আমার বোনের কোনো সমস্যা ছিল না। গর্ভবতী নারীদের স্বাভাবিক যে সমস্যাগুলো থাকে এমনই ছিল। চিকিৎসকও বলেছিলেন তেমন কোনো জটিলতা নেই। নরমালে বাবু হবে। পরে হঠাৎ তাঁরা (চিকিৎসক) সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সিজারের কথা জানায়। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার সময় আমার বোনটা কান্না করে সবার কাছে মাফ চাচ্ছিলেন। তখনো বুঝতে পারি নাই তাঁকে একেবারে নিয়ে যাচ্ছে।’ শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় বোন হারানোর হাহাকার নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তাঁর ছোট ভাই শিপন হোসাইন।
সিজারিয়ান অপারেশনে মা ও নবজাতক ছেলের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর খিলক্ষেতে আশিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে অপারেশন টেবিলে চিকিৎসকদের ‘অদক্ষতায়’ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলানাথপুরের ওসমান মিয়ার স্ত্রী শিখা ও তার নবজাতক ছেলে মারা যায়।
রাজধানীর খিলক্ষেতের আশিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নবজাতককে পৃথিবীর মুখ দেখাবে বলে নিয়ে গিয়ে নিজেই বিদায় নিয়েছেন গর্ভবতী মা শিখা আক্তার। গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরে সিজারের দীর্ঘ সময় পর পরিবারকে জানানো হয় মা ও নবজাতক দুজনই মারা গেছেন। শিখার পরিবারের অভিযোগ, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। চিকিৎসকের অবহেলার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার খিলক্ষেত থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
তাদের অভিযোগ, নবজাতকের গালে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা হাসপাতালের সামনে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছেন। আশিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রিসিপশন থেকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে আগ্রহী নন বলে জানান।এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বদরুল রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় বৃহস্পতিবার একটি মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৭।
শিখার স্বামী ওসমান বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাঁরা শুরুতে বলেছিলেন নরমাল ডেলিভারি হবে। পরে হঠাৎ করে আবার বলে সিজার করা লাগবে। তখন একটা ইনজেকশন দিয়ে দেয়। অপারেশন করার প্রস্তুতি নিলেও তাঁরা এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থাও করতে বলেনি। পরে বলে রক্ত ছিল না, এটা সেটা নানান কথা বলে। এসব মিথ্যা। তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রী-সন্তান মারা গেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে হাসপাতালের এইচ আর অ্যান্ড এডমিনের দায়িত্বে থাকা শাহরিয়াদ শিমুলকে তাঁর মোবাইল ফোনে রিং দিলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে কথা বলার বিষয়ে উর্ধ্বতনদের নিষেধ আছে। তাই আমি কিছু বলতে পারছি না।’ কর্তৃপক্ষের মোবাইল নম্বর চাইলে সেটি দিতে পারেনি হাসপাতালের অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা আরেক কর্মী আয়েশা আক্তার। তিনি দিনের বেলা ছাড়া দেওয়া যাবে না বলে জানান।
শিখার ছোট ভাই শিপন হোসাইন বলেন, ‘আমরা পূর্বাচল ২৬ নম্বর সেক্টরে থাকি। আমার বোনকে পাশেই ১২ নম্বর সেক্টরে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার তার প্রথম বাবু হবে শুনে অনেক আনন্দ নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু বোনকে এভাবে মেরে ফেলা হবে ভাবতে পারিনি।’তিনি বলেন, ‘আপুকে ডাক্তার ফারহানা ম্যাডাম দেখছিলেন। তিনি বলেছিলেন কোনো সমস্যা নাই। পরে এমনটা হলো। এর সঠিক বিচার আমরা চাই।’
এদিকে, ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট ও খিলক্ষেত জোনের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে ও ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।