ডাকাতি ও ধর্ষণ মামলায় দুইবার করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে প্রবাসীর এক বাড়িতে ডাকাতির পাশাপাশি দুই নারীকে ধর্ষণের দায়ে পাঁচ ডাকাতকে দুবার করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬–এর বিচারক মঈন উদ্দিন এ রায় দেন।একই রায়ে একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

আসামিরা হলেন মিজান মাতব্বর ওরফে শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ ডাকাত (৪৫), মো. আবু শামা (৩৭), মো. শহীদুল ইসলাম মুন্সি ওরফে রুবেল (৩৭), জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির হাওলাদার (২৪) ও মো. ইলিয়াস শেখ ওরফে সুমন (৩৬)। আসামি ইলিয়াস পলাতক। অপর চার আসামি ও খালাসপ্রাপ্ত মো. আব্দুল হান্নান ওরফে হান্নান মেম্বারের (৪২) উপস্থিতিতে আদালত এ রায় দেন। 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম বাংলা ম্যাগাজিনকে জানান, দুই মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত পাঁচ আসামিকে দুবার করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ সাজা গ্রেপ্তারের দিন থেকে কার্যকর হবে।আদালত পাঁচজনকে যাবজ্জীবন ছাড়াও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন। ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। 

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে কর্ণফুলী উপজেলার একটি বাড়িতে ঢুকে একদল ডাকাত দুই নারীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পরদিন ওই দুই নারী মামলা করতে গেলে ঠিকানা জটিলতার কথা বলে মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ। পরে তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পাঁচ দিন পর মামলা নেয় পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে।

ঐ রাতে কর্ণফুলী থানার বড় উঠান এলাকার দুবাই প্রবাসীর বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ১৩ ভরি স্বর্ণালংকার, টাকাসহ ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার মালামাল ডাকাতি করে আসামিরা। এ সময় শিশু ও বৃদ্ধ মহিলাকে বেঁধে রেখে আসামিরা ওই বাড়ির এক তরুণী ও গৃহবধূকে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। 

২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর মামলার তদন্তভার যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর হাতে। দায়িত্ব পাওয়ার দিনই মিজান মাতুব্বরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পিবিআই। এরপর ওই রাতেই আবু সামাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুজনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেই খুলে যায় মামলার জট। একে একে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার নাম-পরিচয় প্রকাশিত হয়।

পরে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জবানবন্দিতে উঠে আসে, পেশাদার মুঠোফোন চোর আবু সামার পরিকল্পনায় ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন তাঁরা, জহিরুল বাইরে ছিল। মইদুলসহ বাকিরা ভেতরে গিয়েছিলেন। মইদুল, ইলিয়াছ ও মিজান ধর্ষণে জড়িত ছিলেন। জহিরুল বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁদের সহযোগিতা করেছেন। আর আবু সামা ও হান্নান ডাকাতিতে অংশ নিয়েছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা আদালতে ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর আদালত এই রায় দেন। দণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তিদের তিনজন ডাকাতি ও ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। 

Exit mobile version