অশালীন, শিষ্টাচারবহির্ভূত ও নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে মন্ত্রিত্ব হারান মুরাদ হাসান। গতকাল তাঁর নাম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নামফলক থেকেও মুছে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে থাকা প্রতিমন্ত্রীর তালিকা থেকেও তাঁর নামটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও তাঁর নাম নেই।
অশালীন ও নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ মুরাদ হাসান বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার রাতে কানাডায় যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেছেন। গতকাল বুধবার তিনি একটি টিকিট কাটেন বলে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে।
সদ্য সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মুরাদ হাসানের যে লাল পাসপোর্ট (বিশেষ পাসপোর্ট) ছিল, সেটি পদত্যাগের দিন গত মঙ্গলবার তাঁর কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুরাদ হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুরাদ হাসানের অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের ৩৮৭টি লিংক চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা মুরাদ হাসানের অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের ৩৮৭টি লিংক চিহ্নিত করেছে বিটিআরসি। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল এ তথ্য তুলে ধরেন বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই রাকিব। এই আইনজীবীর তথ্যমতে, চিহ্নিত হওয়া লিংকগুলোর মধ্যে ফেসবুক ১৫টি ও ইউটিউব ২টি লিংক অপসারণ করেছে।
শুনানিকালে আদালত বলেছেন, গুজব, আপত্তিকর অডিও-ভিডিও এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিটিআরসির একটি ‘ভিজিল্যান্স টিম’ (পর্যবেক্ষণ দল) থাকা উচিত, যাতে সংস্থাটি বিষয়গুলো নজরে রেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে।
গতকাল মুরাদ হাসানের বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ আবেদনকারী হয়ে রিটটি করেন। পরে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
রিটে আবেদনের প্রার্থনায় দেখা যায়, জামালপুর-৪ আসনের সাংসদ মুরাদ হাসানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিচারিক অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং তাঁর আসন (জামালপুর-৪) শূন্য ঘোষণায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও টেলিফোন সংলাপ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় মুরাদ হাসানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিচারিক তদন্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
সাংসদ মুরাদ হাসানকে এবার জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জানিয়ে দলের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বলেন, মুরাদ হাসানকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে দলের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং তাঁর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।