অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে বিএনপির ১৫ জন আইনজীবী স্মারকলিপিতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে উপমহাদেশের কোনো আদালতের কোনো নজির আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনো তা শেষ হয়নি, প্রায় শেষ প্রান্তে। কিছুদিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা যেসব সুপারিশ করেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।তিনি বলেছেন, তাদের সুপারিশের পদ্ধতিতে অন্য কোনো দেশে মুক্তি দেওয়ার নজির আছে কি না সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অচিরেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ আবাসিক কার্যালয়ে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যা মামলার রায়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।সম্প্রতি বিএনপিপন্থী ১৫ জন আইনজীবী সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মানবিক কারণে চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে স্মারকলিপি দেন।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান চিকিৎসকরা।দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত আছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশ নেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা স্মারকলিপিতে বলেছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১)–এর ধারামতে সরকার যেকোনো সময় শর্তহীনভাবে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে বা ৪০১–এর ৬ উপধারা মোতাবেক বিশেষ আদেশ দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে।সেদিন জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এটি তাঁরা পরীক্ষা করবেন এবং এ নিয়ে আলোচনা করবেন। যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এসময় আবরার হত্যার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী। বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রকৃত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে দেশে আইনের শাসন আছে।তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটা ডেথ রেফারেন্স, এর নথিপত্রকে বলে পেপার বুক। আমরা তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে দেবো। যেন পেপার বুক তৈরির জন্য হাইকোর্টে কোনো বিলম্ব না হয়।
‘কিছু কিছু মামলা আছে, যেগুলো সমাজের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। সরকারের দায়িত্ব এসব মামলা দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে সমাজকে আশ্বস্ত করা— আইনের শাসন দেশে বিরাজ করছে। সেই দায়িত্ব পালনে শেখ হাসিনার সরকার এখন পর্যন্ত সফল।’
আনিসুল হক বলেন, এই মামলায় ২৫ আসামির মধ্যে তিন জন শুরু থেকেই পলাতক। বাকি ২২ জন আদালতে উপস্থিত ছিল। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় মামলাটির রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।রাষ্ট্রপক্ষ অক্লান্ত পরিশ্রম করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করায় তাদের ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।