হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ভারতের প্রতিরক্ষাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত নিহত হয়েছেন। তাঁর স্ত্রীসহ হেলিকপ্টারের আরও ১১ আরোহীও নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে তামিলনাড়ুতে এই দুর্ঘটনা ঘটে।হেলিকপ্টারটিতে ১৪ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে ৫ জন ক্রু এবং বাকি ৯ জন যাত্রী। যাত্রীদের মধ্যে বিপিন রাওয়াত, তাঁর স্ত্রী মাধুলিকা রাওয়াত ছাড়া সেনা কমান্ডোরা ছিলেন।
এ দুর্ঘটনায় আরও প্রাণ হারিয়েছেন প্রতিরক্ষা সহকারী, নিরাপত্তা কমান্ডো, বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাসহ আরও ১২ জন। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে এক টুইটে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। গুরুতর আহত এক পুরুষ আরোহীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে সেসময় বিপিন রাওয়াত জীবিত নাকি মৃত তা নিশ্চিত ছিল না। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় বিমানবাহিনীই বিষয়টি নিশ্চিত করলো।
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে তামিলনাড়ুর নীলগিরি হিলস এলাকায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। বেলা ২টার দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনী এই দুর্ঘটনার খবর জানায়। হেলিকপ্টারের ১৪ আরোহীর মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কয়েক ঘণ্টা পর জানা যায়। তবে বিপিন রাওয়াতের অবস্থা সম্পর্কে কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না।সন্ধ্যায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে বিপিন রাওয়াতসহ ১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হেলিকপ্টারটি নীলগিরি জেলার ওয়েলিংটন ডিফেন্স সার্ভিস ট্রেইনিং ইনস্টিটিউশনের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে এ ঘটনার বেশ কিছু ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র একজন এখনো বেঁচে রয়েছেন। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ওই গ্রুপ ক্যাপ্টেনও মারাত্মকভাবে দগ্ধ। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
৬৩ বছর বয়সী জেনারেল বিপিন রাওয়াত ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ভারতের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ–এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে সমন্বয়ের জন্য ওই পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল।চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ হিসেবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রধান সামরিক উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করতেন বিপিন রাওয়াত। পাশাপাশি ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরামর্শকের ভূমিকাও পালন করতেন তিনি।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে প্রায় চার দশক ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এ কর্মকর্তার। একসময় ভারতশাসিত কাশ্মীর এবং চীন সীমান্তের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে সশস্ত্র সংঘাত কমানো এবং প্রতিবেশী মিয়ানমারে আন্তঃসীমান্ত বিদ্রোহ দমন অভিযানে তদারকির জন্য বিপিন রাওয়াতকে অনেকটা কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
১৯৭৮ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বিপিন রাওয়াত। সেনাবাহিনীতে চার দশকের পেশাগত জীবনে ভারতের সংঘাতপ্রবণ জম্মু ও কাশ্মীরে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চীন সীমান্তেও ভারতীয় বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।