অপরাধএক্সক্লুসিভকিশোরগঞ্জবাংলাদেশ

পাথরের আঘাতে ধর্ষকের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে এক ইতালি প্রবাসীকে গুরুতর আহত করে মুমূর্ষু অবস্থায় নিজের ভাড়া বাসায় তালাবন্দি অবস্থায় ফেলে রেখে থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন তাসলিমা আক্তার (২৫) নামের এক গৃহবধূ। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ইতালি প্রবাসী মো. আমিনুল আলম (৪৫) কে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে কয়েক ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়। গত শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নীলগঞ্জ রোডের শোলাকিয়া সেবাশ্রম সংলগ্ন প্রফেসর খায়রুল আলম সবুজের বাসায় এই ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নীলগঞ্জ মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন এক গৃহবধূ। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ওই গৃহবধূর ভাড়া বাসায় একই এলাকার আমিনুল ইসলাম প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তখন ওই গৃহবধূ ঘরে থাকা পাথরের শিল দিয়ে আমিনুলের মাথায় আঘাত করেন। এতে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন আমিনুল। তখন ওই গৃহবধূ ভয়ে ঘরে তালা দিয়ে থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানান। 

নিহত মো. আমিনুল আলম নীলগঞ্জ রোডের শোলাকিয়া সেবাশ্রম এলাকার মৃত আব্দুছ ছামাদের ছেলে। তিনি ২ মাস ৪ দিন আগে ছুটিতে ইতালি থেকে দেশে ফেরেন। আগামী ২রা জানুয়ারি তার ইতালি পাড়ি দেয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার জেলার হোসেনপুর উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামের নাজমুল আলমের স্ত্রী। 

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘরের তালা ভেঙে গুরুতর আহত অবস্থায় আমিনুলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ভালুকা এলাকায় ভোর ৪টার দিকে আমিনুলের মৃত্যু হয়। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় এসে ডিউটি অফিসারকে জানান, ইতালি প্রবাসী মো. আমিনুল আলমের বাসায় তারা ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। বাসার মালিক আমিনুল আলমের চরিত্র ভালো না থাকায় সে বাসা ছেড়ে প্রায় আড়াই বছর ধরে একই এলাকায় প্রভাষক মো. খায়রুল কবীর ভূঞা সবুজের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন।

গত শুক্রবার বিকালে স্ত্রী-সন্তানদের ভাড়া বাসায় রেখে নাজমুল আলম গ্রামের বাড়ি হোসেনপুরে যান। এ সুযোগে রাত পৌনে ১১টার দিকে আমিনুল আলম গৃহবধূর ভাড়া বাসায় গিয়ে তাকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালান। তাসলিমা আক্তার তখন নিজেকে বাঁচাতে হাতের কাছে থাকা পাথরের শিল দিয়ে আমিনুল আলমের মাথায় উপর্যপুরি আঘাত করেন। এতে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আমিনুল মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে মুমূর্ষু অবস্থায় আমিনুলকে সেখানে ফেলে রেখে তাসলিমা থানায় ছুটে গিয়ে পুলিশকে ঘটনার বিবরণ দেন।

এদিকে, নিহত আমিনুল আলমের স্ত্রী সোমা আলম জানান, তিন বছর আগে তাসলিমা আক্তার সপরিবারে তাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তখন তারা ২-৩ মাস ভাড়া থাকার পর বাসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত শুক্রবার রাতে টুকটাক কেনাকাটার জন্য তার স্বামী আমিনুল আলম বাসার বাইরে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার আগে রাস্তা থেকে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম জানান, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা পাথরের শিলটি উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ঘটনার নিবিড় তদন্ত চলছে। এ ছাড়া এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Back to top button