আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে যে ব্যক্তি ফোন করে এবং মুঠোফোন খুদে বার্তা পাঠিয়ে ফ্লাইটের যাত্রীর কাছে বোমা থাকার তথ্য দিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ওই ব্যক্তি মালয়েশিয়ায় থাকেন এবং তাঁর নাম আলমগীর।
আলমগীরকে আইনের আওতায় আনতে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে এ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই সঙ্গে আলমগীরকে ইন্ধনকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো জানায়, গত বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি এক নাগরিক ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ফোন করেন।
মালয়েশিয়ার নম্বর থেকে কল করে ওই ব্যক্তি বলেন, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে ছেড়ে আসা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের এমএইচ-১৯৬ ফ্লাইটটিতে তিনজন পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছেন। তাঁরা বোমা বহন করছেন। পরে একই বিষয়ে তাঁকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। এরপর হোটেলের ওই কর্মকর্তা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানান।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, তথ্যদাতা আলমগীরের উদ্দেশ্য কী, তাঁর মদদদাতা কারা, এসবের পেছনে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খতিয়ে দেখছে।
ওই ফ্লাইটে পাকিস্তানি তিন নাগরিকের মধ্যে একজনের নাম আজিজুল ইসলাম বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ফ্লাইটে আজিজুল ইসলাম নামের কোনো যাত্রী ছিলেন না। আরিজুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন। পরে বোমাসহ পাকিস্তানের নাগরিকদের বিমানে থাকার ব্যাপারে যে তথ্য দিয়েছিলেন, তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মালয়েশিয়ান ফ্লাইটটি অবতরণের আগে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল, বোর্ডিং ব্রিজ, ট্যাক্সিওয়ে ও রানওয়েতে সতর্ক অবস্থান নেয় র্যাব-পুলিশ, বিমানবন্দরের কিউআরএফ টিম, র্যাবের ডগ স্কোয়াড, বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দল, ফায়ার সার্ভিস। ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতির কারণে নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পর ফ্লাইটটি বোর্ডিং ব্রিজ থেকে নিরাপদ দূরত্বে নামতে দেওয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, ফ্লাইটে বোমা থাকার খবর ছড়িয়ে পড়লে গত বুধবার রাত ৯টার দিকে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালকের উপস্থিতিতে বিমানবন্দরের টাস্কফোর্স কমিটির সভা হয়। সভায় সবাই একমত হন, প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা না পাওয়া গেলেও তা নিয়ে সুযোগ নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।
ফ্লাইটটি ঘিরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও সশস্ত্র বাহিনী অবস্থান নেয়। যাত্রীদের কয়েক দফা তল্লাশি করে বের করে বিমানবাহিনীর বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দল ফ্লাইটে তল্লাশি চালায়। রাত একটার দিকে তল্লাশি শেষে ফ্লাইটে কিছু পাওয়া যায়নি।