ঠাকুরগাঁওবাংলাদেশরাজনীতি

নির্বাচনী সহিংসতায় ঠাকুরগাঁওয়ে নিহত ৩

ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নে রবিবার রাতে ও সোমবার ভোরে নির্বাচনী সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা একটি ভোটকেন্দ্রে আটকে থাকায় বিজিবির একটি দল তাদের উদ্ধার করতে সেখানে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একপর্যায়ে তাদের গুলি চালাতে হয়। বিজিবির গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের আরও তদন্তের প্রয়োজন।’  

তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ সোমবার বেলা পৌনে ১টার দিকে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ম্যাগাজিনকে বলেন, উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করার জন্য বিজিবি গুলি ছুঁড়ে। সেই গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক জন। 

নিহত তিনজন হলেন ঘিডোব গ্রামের অবিনাশ রায়ের ছেলে আদিত্য কুমার রায় (২২), হাবিবপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. সাহাবুলি (৩৭) ও ছিট ঘিডোব গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে মোজাহারুল ইসলাম (৩৫)। নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিজ নিজ বাড়িতে রাখা আছে।

পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনজনের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং অপর দুজন সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।আহতদের মধ্যে দুইজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম ও তোফায়েল আহমেদ জানান, গতকাল রাতে ভোটের ফলের কাগজ পোলিং এজেন্টদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছিল না। এতে এজেন্টরা ক্ষুব্ধ হন। ভোটারদের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা লাঠিসোঁটা নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিজিবির সদস্যদের দিকে তেড়ে আসেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবি গুলি ছুঁড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন মারা যান। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন।

গ্রামবাসীর ভাষ্য, খনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পীরগঞ্জ উপজেলার ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা ও অন্যান্য কার্যক্রম শেষে গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করতে বিজিবি ৪৫ থেকে ৫০টি গুলি ছোড়ে। এতে হতাহত হওয়ার ওই ঘটনা ঘটে। পরে স্কুলের মাঠ ফাঁকা হয়ে গেলে বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ভোটের মালপত্র নিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে এলাকা থেকে চলে যান। হতাহত ব্যক্তিরা মাঠে পড়ে ছিলেন।

গুলিতে নিহত মো. সাহাবুলির বাবা তফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মোর বেটা গতকাল দুপুরে ওই সেন্টারত ভোট দিচে। ভোটের ফল জানিবার জন্য সান (গোসল) করে সন্ধ্যায় ঘিডোব স্কুলত গেছিল। কিন্তু গুলি লাগে মরে গেল। লাশ হয়ে গেল মোর বেটা।’

গুলিতে নিহত আদিত্য কুমারের বাবা অবিনাশ চন্দ্র বলেন, ভোট সেন্টার থেকে বাড়িতে চলে আসতে ছেলেকে কয়েক বার ফোন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আদিত্য বাড়িতে না এসে সেখানেই ছিলেন। শেষ পর্যন্ত গুলিতে ছেলের মৃত্যু হলো।

এদিকে, বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে রবিবার বিকালে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এতে নির্বাচনী সহিংসতায় কমপক্ষে আটজন নিহত এবং কমপক্ষে ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, যশোর ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।ইউপি নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

Back to top button